fish life

৫০ টি মাছের নাম

বাংলাদেশ – নদী-মাতৃক এই দেশ যেখানে জল এবং মাছের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে অর্থনীতি – সবকিছুতেই মাছের অবদান অপরিসীম। “মাছে-ভাতে বাঙালি” – এই প্রবাদটি আমাদের জীবনযাত্রার সাথে মাছের নিবিড় সম্পর্কের প্রমাণ।

বাংলাদেশে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ রয়েছে, যার মধ্যে ১৪০টিরও বেশি প্রজাতি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত বিপর্যয়, অতিরিক্ত মাছ আহরণ এবং জলদূষণের কারণে এই বিশাল জৈববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (BFRI) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশীয় প্রায় ৬৪টি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।

এই প্রেক্ষাপটে, আমাদের দেশের ৫০টি উল্লেখযোগ্য মাছ প্রজাতি সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশের ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ মাছ প্রজাতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব – তাদের বৈজ্ঞানিক নাম, বৈশিষ্ট্য, পুষ্টিমান, বাজার মূল্য এবং সংরক্ষণ অবস্থা সহ।

মিঠা পানির প্রধান মাছ সমূহ

১. রুই (Labeo rohita)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: রুই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ। দেহ প্রশস্ত, পৃষ্ঠদেশ ঈষৎ উত্তোলিত, আঁশ বড় এবং নিয়মিত সজ্জিত। রুইয়ের গা সিলভারি-সোনালী, পেট সাদাটে। বড় রুই মাছের দৈর্ঘ্য ১ মিটার পর্যন্ত হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: রুই মাছে প্রোটিন (১৬-১৮%), ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম রুই মাছে প্রায় ৯৭ ক্যালোরি শক্তি থাকে। রুই মাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর কম কোলেস্টেরল এবং উচ্চ প্রোটিন।

জীবনযাপন ও প্রজনন: রুই মাছ ৪-৫ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। বর্ষা মৌসুমে (মে-আগস্ট) এরা প্রজনন করে। একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী রুই মাছ প্রায় ২-৩ লক্ষ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে রুই মাছের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২.৫ লক্ষ মেট্রিক টন, যা মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২% (বাংলাদেশ ফিশারিজ স্ট্যাটিস্টিকস, ২০২২)। বাজারে রুই মাছের মূল্য প্রতি কেজি ২৫০-৪০০ টাকা (মৌসুম ও আকার ভেদে)।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২. কাতলা (Catla catla)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: কাতলা দেখতে রুইয়ের মতো, তবে এর মাথা বড় এবং ঠোঁট মোটা। দেহ রূপালী, পৃষ্ঠদেশ গাঢ় ধূসর। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার এবং ওজন ৪০-৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: কাতলা মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই এবং বি কমপ্লেক্স প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম কাতলায় প্রায় ১১৭ ক্যালোরি শক্তি এবং ৩ গ্রাম ফ্যাট থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: কাতলা জলের উপরের স্তরে থাকে এবং প্লাংকটন খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা ৪-৫ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষায় (জুন-জুলাই) প্রায় ১.৫-২ লক্ষ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক প্রায় ১.৮ লক্ষ মেট্রিক টন কাতলা উৎপাদিত হয়। বাজারে কাতলা মাছের দাম প্রতি কেজি ২৩০-৩৮০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩. মৃগেল (Cirrhinus mrigala)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: মৃগেল মাছের দেহ সিলিন্ডারাকার, মাথা ছোট, ঠোঁট পাতলা। দেহের রং উপরে ধূসর-সবুজাভ, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। সাধারণত ৫০-৬০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, তবে সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: মৃগেলে প্রোটিন (১৬-১৮%), ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম মৃগেলে প্রায় ১০৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: মৃগেল মাছ জলের নিচের স্তরে বসবাস করে এবং ডেট্রাইটাস, কাদামাটি, সড়া জাতীয় খাবার খায়। এরা ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে ১-১.৫ লক্ষ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে মৃগেল মাছের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১.২ লক্ষ মেট্রিক টন। বাজারে এর মূল্য প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪. কালবাউশ (Labeo calbasu)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: কালবাউশের দেহ রুইয়ের মতো, তবে রং কালচে-নীলাভ। ঠোঁট মোটা, আঁশ ছোট এবং মাঝারি আকারের। সাধারণত ৩০-৪০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: কালবাউশে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন (১৭-১৯%) এবং প্রোটিন:ফ্যাট অনুপাত বেশি। এতে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম কালবাউশে প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: কালবাউশ জলের মাঝারি স্তরে বসবাস করে এবং প্রধানত প্লাংকটন ও জৈব পদার্থ খায়। ৩ বছর বয়সে এরা প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে ৮০,০০০-১,২০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক প্রায় ৪৫,০০০ মেট্রিক টন কালবাউশ উৎপাদিত হয়। বাজারে এর দাম প্রতি কেজি ২২০-৩২০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৫. ইলিশ (Tenualosa ilisha)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – ক্লুপিফর্মেস, ফ্যামিলি – ক্লুপিডে

বৈশিষ্ট্য: ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। দেহ চ্যাপ্টা, পৃষ্ঠ নীলাভ-সবুজ, পার্শ্ব রূপালী, পেট সাদাটে। আঁশ ছোট এবং নরম। সাধারণত ৩০-৫০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, ওজন ১-৩ কেজি।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: ইলিশে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (প্রতি ১০০ গ্রামে ২.২ গ্রাম), ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন (২০-২২%) থাকে। ১০০ গ্রাম ইলিশে প্রায় ৩১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: ইলিশ অ্যানাড্রোমাস প্রজাতির মাছ – সমুদ্রে বাস করে কিন্তু প্রজননের জন্য নদীতে আসে। প্রায় ৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রতি স্ত্রী মাছ প্রায় ১.২-২ মিলিয়ন ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে ইলিশের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৫.৫ লক্ষ মেট্রিক টন (২০২৩), যা দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২% এবং সামুদ্রিক মাছের প্রায় ৪০%। বাজারে ইলিশের মূল্য আকার ও মৌসুম ভেদে প্রতি কেজি ৮০০-২০০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৬. পাবদা (Ompok pabda)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – সিলুরিডে

বৈশিষ্ট্য: পাবদা মাছের দেহ লম্বা, চ্যাপ্টা, মাথা ছোট, দু’জোড়া গোঁফ থাকে। পিঠের দিক কালচে-ধূসর, পেট সাদাটে। সাধারণত ২০-২৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: পাবদা মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম পাবদা মাছে প্রায় ১২৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: পাবদা মূলত রাত্রিচর মাছ, যারা ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ২০,০০০-৩০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক পাবদা উৎপাদন প্রায় ২৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৬০০-৯০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৭. শিং (Heteropneustes fossilis)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – হেটেরোপনিউস্টিডে

বৈশিষ্ট্য: শিঙের দেহ লম্বা, সিলিন্ডারাকার, চারটি জোড়া গোঁফ আছে। দেহের রং কালচে-ধূসর বা কালচে-বাদামি, পেট ফ্যাকাশে। বুক ও পেক্টোরাল পাখনায় তীক্ষ্ণ কাঁটা থাকে। সাধারণত ২০-৩০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: শিং মাছে ২১-২৩% প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ এবং বি কমপ্লেক্স প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম শিঙে প্রায় ১১৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। শিং মাছকে বাংলাদেশে “জীবন্ত ভিটামিন ক্যাপসুল” হিসেবেও ডাকা হয়।

জীবনযাপন ও প্রজনন: শিং মাছ অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের কারণে স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলেও বেঁচে থাকতে পারে। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮,০০০-১০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক শিং উৎপাদন প্রায় ২০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৫০০-৭০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৮. মাগুর (Clarias batrachus)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – ক্লারিডে

বৈশিষ্ট্য: মাগুরের দেহ সিলিন্ডারাকার, চারটি জোড়া গোঁফ, মাথা চ্যাপ্টা। দেহ কালচে-ধূসর, ময়লাটে, পেট ফ্যাকাশে। ২০-৪০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: মাগুর মাছে ২০-২২% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই, কে, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম মাগুরে প্রায় ১২০ ক্যালোরি শক্তি থাকে। মাগুর মাছকে রক্তাল্পতা, ডায়াবেটিস এবং পোস্ট-সার্জারি রিকভারির জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়।

জীবনযাপন ও প্রজনন: মাগুর স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলেও বেঁচে থাকতে পারে, এমনকি কিছু সময় জলের বাইরেও থাকতে পারে। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১৫,০০০-২০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক মাগুর উৎপাদন প্রায় ১৮,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৫০০-৮০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৯. বোয়াল (Wallago attu)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – সিলুরিডে

বৈশিষ্ট্য: বোয়াল বাংলাদেশের বৃহত্তম মিঠাপানির মাছগুলির মধ্যে একটি। দেহ লম্বা, মাথা বড় ও চ্যাপ্টা, মুখ বড়, দুটি জোড়া গোঁফ। দেহ কালচে-ধূসর, পেট সাদাটে। সাধারণত ৮০-১০০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ২ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: বোয়াল মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম বোয়ালে প্রায় ১৪০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: বোয়াল মাংসাশী মাছ, যারা অন্যান্য মাছ, ব্যাঙ, ঝিনুক ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪০,০০০-৫০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক বোয়াল উৎপাদন প্রায় ১৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১০. আইড় (Mystus aor/Sperata aor)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – বাগ্রিডে

বৈশিষ্ট্য: আইড় মাছের দেহ লম্বা, মাথা চ্যাপ্টা, চারটি জোড়া গোঁফ থাকে। দেহের রং উপরে কালচে-ধূসর, পাশে সোনালী-রূপালী। সাধারণত ৪০-৬০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: আইড় মাছে ১৮-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম আইড়ে প্রায় ১২৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: আইড় মাছ ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ২৫,০০০-৩৫,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক আইড় উৎপাদন প্রায় ১২,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১১. গুলশা (Mystus cavasius)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – বাগ্রিডে

বৈশিষ্ট্য: গুলশা বা কাবাসি টেংরা দেখতে টেংরার মতো, তবে আকারে বড়। দেহের রং উপরে ধূসর-বাদামি, পাশে রূপালী। চারটি জোড়া গোঁফ থাকে। সাধারণত ১৫-২৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: গুলশা মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম গুলশায় প্রায় ১২০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: গুলশা মাছ ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১৫,০০০-২০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক গুলশা উৎপাদন প্রায় ৮,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১২. টেংরা (Mystus vittatus)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – বাগ্রিডে

বৈশিষ্ট্য: টেংরা মাছের দেহ লম্বা, চারটি জোড়া গোঁফ থাকে। দেহ ধূসর-বাদামি, পাশে দুইটি কালো দাগ থাকে। সাধারণত ১০-১৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: টেংরা মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম টেংরায় প্রায় ১১৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: টেংরা মাছ প্রধানত রাত্রিচর, ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ১.৫-২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮,০০০-১২,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক টেংরা উৎপাদন প্রায় ৬,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১৩. পুঁটি (Puntius sophore)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: পুঁটি মাছের দেহ চ্যাপ্টা, দেহের রং সোনালী-রূপালী, পেট সাদাটে। সাধারণত ৮-১২ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: পুঁটি মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম পুঁটিতে প্রায় ১০৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। পুঁটি মাছ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উৎকৃষ্ট উৎস।

জীবনযাপন ও প্রজনন: পুঁটি মাছ সর্বভুক, তবে প্রধানত প্লাংকটন খায়। ১ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪,০০০-৬,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক পুঁটি উৎপাদন প্রায় ৩০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২০০-৪০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১৪. বাটা (Labeo bata)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: বাটা মাছের দেহ রুইয়ের মতো, তবে আকারে ছোট। দেহের রং সোনালী-রূপালী, পৃষ্ঠ ধূসর, পেট সাদাটে। সাধারণত ২০-৩০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: বাটা মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম বাটাতে প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: বাটা মাছ জলের নিচের স্তরে বসবাস করে এবং প্রধানত প্লাংকটন ও জৈব পদার্থ খায়। ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১৫,০০০-২০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক বাটা উৎপাদন প্রায় ১৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২০০-৩৫০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১৫. ঘনিয়া (Labeo gonius)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: ঘনিয়া মাছের দেহ রুইয়ের মতো, দেহের রং উপরে কালচে-ধূসর, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। আঁশ ছোট এবং মাঝারি আকারের। সাধারণত ৩০-৪০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: ঘনিয়া মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম ঘনিয়াতে প্রায় ১১২ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: ঘনিয়া মাছ জলের নিচের স্তরে বসবাস করে এবং প্রধানত প্লাংকটন ও জৈব পদার্থ খায়। ৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪০,০০০-৫০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক ঘনিয়া উৎপাদন প্রায় ১০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১৬. আরী (Labeo ariza)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: আরী মাছের দেহ ঘনিয়ার অনুরূপ, তবে আরো চ্যাপ্টা। দেহের রং উপরে ধূসর-বাদামি, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। আঁশ ছোট। সাধারণত ২০-৩০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: আরী মাছে ১৬-১৭% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম আরীতে প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: আরী মাছ জলের মাঝারি স্তরে বসবাস করে এবং প্রধানত প্লাংকটন ও জৈব পদার্থ খায়। ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০,০০০-৪০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক আরী উৎপাদন প্রায় ৮,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১৭. কই (Anabas testudineus)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – পারসিফর্মেস, ফ্যামিলি – অ্যানাবান্টিডে

বৈশিষ্ট্য: কই মাছের দেহ মোটামুটি চ্যাপ্টা, মাথা বড়, পাখনা শক্ত ও কাঁটাযুক্ত। দেহের রং কালচে-বাদামি, পেট ফ্যাকাশে। সাধারণত ১০-১৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: কই মাছে ১৯-২১% প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম কই মাছে প্রায় ১০৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। কই মাছের আয়রন উচ্চ মাত্রায় থাকায় এটি রক্তাল্পতা রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী।

জীবনযাপন ও প্রজনন: কই মাছ অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের কারণে স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলে বেঁচে থাকতে পারে, এমনকি কিছু সময় জলের বাইরেও চলাফেরা করতে পারে। ১.৫-২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫,০০০-১০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক কই উৎপাদন প্রায় ২৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৭০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১৮. শোল (Channa striata)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – চ্যানিফর্মেস, ফ্যামিলি – চ্যানিডে

বৈশিষ্ট্য: শোল মাছের দেহ সিলিন্ডারাকার, মাথা মোটামুটি বড়, মুখ বড়। দেহের রং উপরে কালচে-ধূসর, পাশে কালো দাগযুক্ত। সাধারণত ৩০-৪০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, তবে সর্বোচ্চ ৬০ সেমি পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: শোল মাছে ১৯-২১% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম শোলে প্রায় ১১৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে। শোল মাছের প্রোটিনে ৮টি অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড উপস্থিত থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: শোল মাংসাশী মাছ, যারা ছোট মাছ, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে। অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের কারণে স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলেও বেঁচে থাকতে পারে। ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪,০০০-৮,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক শোল উৎপাদন প্রায় ১৮,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

১৯. গজার (Channa marulius)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – চ্যানিফর্মেস, ফ্যামিলি – চ্যানিডে

বৈশিষ্ট্য: গজার বাংলাদেশের বৃহত্তম চ্যানিড মাছ। দেহ সিলিন্ডারাকার, মাথা বড়, মুখ বড়। দেহের রং কালচে-সবুজাভ, পাশে সাদা ও কালো দাগ থাকে। সাধারণত ৫০-৬০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, তবে সর্বোচ্চ ১.৮ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: গজার মাছে ১৯-২১% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম গজারে প্রায় ১২৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: গজার মাংসাশী মাছ, যারা অন্যান্য মাছ, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে। অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের কারণে স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলেও বেঁচে থাকতে পারে। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪,০০০-৬,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক গজার উৎপাদন প্রায় ১০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

২০. টাকি/লাঠা (Channa punctata)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – চ্যানিফর্মেস, ফ্যামিলি – চ্যানিডে

বৈশিষ্ট্য: টাকি মাছের দেহ সিলিন্ডারাকার, শোলের চেয়ে ছোট। দেহের রং কালচে-সবুজাভ, পাশে বিন্দু বিন্দু ছোপ থাকে। সাধারণত ১৫-২৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: টাকি মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম টাকিতে প্রায় ১১২ ক্যালোরি শক্তি থাকে। টাকি মাছ পেটের রোগের চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ উপকারী।

জীবনযাপন ও প্রজনন: টাকি মাছ ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে। অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের কারণে স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলেও বেঁচে থাকতে পারে। ১-২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ২,০০০-৪,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক টাকি উৎপাদন প্রায় ২০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২১. চেলা (Chela cachius)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: চেলা ছোট আকারের মাছ। দেহ লম্বা, পাতলা ও চ্যাপ্টা। দেহের রং উজ্জ্বল রূপালী, পিঠের দিকে নীলাভ আভা। সাধারণত ৬-১০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: চেলা মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম চেলায় প্রায় ৯৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে। চেলা মাছের ক্যালসিয়াম উচ্চ মাত্রায় থাকে, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: চেলা মাছ জলের উপরের স্তরে থাকে এবং প্লাংকটন ও ছোট কীটপতঙ্গ খেয়ে বাঁচে। ১ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ২০০-৫০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক চেলা উৎপাদন প্রায় ৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২২. ফলি/ফলিকাটা (Notopterus notopterus)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – ওস্টেগ্লসোমর্ফেস, ফ্যামিলি – নোটোপ্টেরিডে

বৈশিষ্ট্য: ফলি মাছের দেহ লম্বা, চ্যাপ্টা, পেট ধারালো। পেটের পাখনা লম্বা, লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত। দেহের রং রূপালী, পিঠের দিকে ধূসর। সাধারণত ২০-৩০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: ফলি মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম ফলিতে প্রায় ১১৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: ফলি মাছ ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫,০০০-১০,০০০ ডিম পাড়ে। ফলি মাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এরা ডিম সংরক্ষণ করে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক ফলি উৎপাদন প্রায় ৬,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২৩. চিতল (Chitala chitala)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – ওস্টেগ্লসোমর্ফেস, ফ্যামিলি – নোটোপ্টেরিডে

বৈশিষ্ট্য: চিতল মাছের দেহ লম্বা, চ্যাপ্টা, পেট ধারালো, ফলির মতো তবে আকারে বড়। পেটের পাখনা লম্বা, লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত। দেহের রং রূপালী, পিঠের দিকে কালচে। দেহে কালো বিন্দু থাকে। সাধারণত ৬০-৮০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১.২ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: চিতল মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম চিতলে প্রায় ১২০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: চিতল মাছ প্রধানত মাংসাশী, ছোট মাছ ও কীটপতঙ্গ খেয়ে বাঁচে। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১০,০০০-২০,০০০ ডিম পাড়ে। চিতল মাছও ডিম সংরক্ষণ করে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক চিতল উৎপাদন প্রায় ৮,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২৪. মলা/মোলা (Amblypharyngodon mola)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: মলা ছোট আকারের মাছ। দেহ লম্বাটে, চ্যাপ্টা। দেহের রং উজ্জ্বল রূপালী, পাশে কালো দাগ আছে। সাধারণত ৫-৮ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: মলা মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ (১০০ গ্রামে প্রায় ২,৫০০ আই.ইউ.), আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম মলায় প্রায় ৯৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। মলা মাছ ভিটামিন এ এর অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস।

জীবনযাপন ও প্রজনন: মলা মাছ জলের উপরের স্তরে থাকে এবং প্লাংকটন খেয়ে বাঁচে। ৬-৮ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫০০-১,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক মলা উৎপাদন প্রায় ১০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২০০-৪০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২৫. রাণী/খলিশা (Colisa fasciata)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – পারসিফর্মেস, ফ্যামিলি – অসফ্রোনেমিডে

বৈশিষ্ট্য: রাণী মাছের দেহ চ্যাপ্টা, উচ্চতা বেশি, পার্শ্বীয় ভাবে সংকুচিত। দেহের রং নীলাভ-সবুজ, গায়ে লম্বালম্বি নীল-লাল ডোরাকাটা দাগ থাকে। পাখনা দীর্ঘ ও রঙিন। সাধারণত ৮-১০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: রাণী মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, আয়রন, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম রাণী মাছে প্রায় ১০০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: রাণী মাছ জলের উপরের স্তরে থাকে এবং প্লাংকটন ও ছোট কীটপতঙ্গ খেয়ে বাঁচে। ১ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। পুরুষ মাছ বাবল নেস্ট তৈরি করে যেখানে স্ত্রী মাছ ৩০০-৫০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক রাণী উৎপাদন প্রায় ৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২৫০-৪০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২৬. চাপিলা (Gudusia chapra)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – ক্লুপিফর্মেস, ফ্যামিলি – ক্লুপিডে

বৈশিষ্ট্য: চাপিলার দেহ চ্যাপ্টা, ইলিশের মতো কিন্তু আকারে ছোট। দেহের রং উজ্জ্বল রূপালী, পিঠের দিকে নীলাভ আভা। আঁশ নরম এবং পেটের দিকে ধারালো। সাধারণত ১০-১৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: চাপিলা মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম চাপিলায় প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: চাপিলা মাছ জলের উপরের স্তরে থাকে এবং প্রধানত প্লাংকটন খায়। ১.৫-২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১০,০০০-১৫,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক চাপিলা উৎপাদন প্রায় ৮,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ১৮০-৩০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২৭. কাঁকিলা (Xenentodon cancila)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – বেলোনিফর্মেস, ফ্যামিলি – বেলোনিডে

বৈশিষ্ট্য: কাঁকিলা মাছের দেহ লম্বা, সরু, সিলিন্ডারাকার। ঠোঁট লম্বা ও সূচালো, চোখ বড়। দেহের রং উপরে সবুজাভ, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। সাধারণত ২০-৩০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: কাঁকিলা মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ই, ফসফরাস, আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম কাঁকিলায় প্রায় ১০৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: কাঁকিলা মাছ মাংসাশী, জলের উপরের স্তরে থাকে এবং ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ খেয়ে বাঁচে। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫,০০০-৮,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক কাঁকিলা উৎপাদন প্রায় ৪,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২০০-৩৫০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২৮. খৈরা (Pangasius pangasius)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – প্যাঙ্গাসিডে

বৈশিষ্ট্য: খৈরা মাছের দেহ লম্বা, মোটামুটি মোটা, মাথা ছোট। দুটি জোড়া গোঁফ আছে। দেহের রং উপরে কালচে-ধূসর, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। সাধারণত ৮০-১০০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১.৫ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: খৈরা মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম খৈরায় প্রায় ১২০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: খৈরা মাছ সর্বভুক, জলের মাঝারি স্তরে থাকে। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ২৫,০০০-৪০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক খৈরা উৎপাদন প্রায় ৬,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “এনডেঞ্জারড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২৯. পাঙ্গাস (Pangasianodon hypophthalmus)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – প্যাঙ্গাসিডে

বৈশিষ্ট্য: পাঙ্গাস মাছের দেহ লম্বা, গভীর, মাথা ছোট। দেহের রং উপরে ধূসর-বাদামি, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। দুটি জোড়া গোঁফ আছে। সাধারণত ৫০-৭০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: পাঙ্গাস মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম পাঙ্গাসে প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: পাঙ্গাস মাছ সর্বভুক, জলের মাঝারি স্তরে থাকে। ৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪০,০০০-৮০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক পাঙ্গাস উৎপাদন প্রায় ৪০০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ১৫০-২৫০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “এনডেঞ্জারড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩০. বাঘাইর (Bagarius bagarius)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – সিসোরিডে

বৈশিষ্ট্য: বাঘাইর মাছের দেহ লম্বা, মাথা চ্যাপ্টা, চারটি জোড়া গোঁফ আছে। দেহের রং ধূসর-বাদামি, গায়ে অনিয়মিত কালো দাগ থাকে। সাধারণত ৮০-১০০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ২ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: বাঘাইর মাছে ১৯-২১% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম বাঘাইরে প্রায় ১৩০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: বাঘাইর মাংসাশী মাছ, যারা অন্যান্য মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ৪-৫ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ২০,০০০-৩০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক বাঘাইর উৎপাদন প্রায় ৩,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৬০০-৯০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩১. গুজি আইড় (Mystus gulio)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – বাগ্রিডে

বৈশিষ্ট্য: গুজি আইড়ের দেহ লম্বা, মাথা চ্যাপ্টা, চারটি জোড়া গোঁফ থাকে। দেহের রং কালচে-ধূসর বা ধূসর-বাদামি। সাধারণত ১৫-২০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: গুজি আইড়ে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম গুজি আইড়ে প্রায় ১১৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: গুজি আইড় মাছ লবণাক্ত ও মিঠা পানির সংমিশ্রণ এলাকায় বসবাস করে। ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১০,০০০-১৫,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক গুজি আইড় উৎপাদন প্রায় ৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩২. বাইম (Mastacembelus armatus)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিঙ্কিফর্মেস, ফ্যামিলি – মাস্টাসেম্বেলিডে

বৈশিষ্ট্য: বাইম মাছের দেহ লম্বা, নাকের অগ্রভাগ সুচালো। পিঠের দিকে কাঁটাযুক্ত, পাখনা লম্বা ও নরম। দেহের রং বাদামি বা কালচে-বাদামি, গায়ে অনিয়মিত দাগ থাকে। সাধারণত ৪০-৫০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ৯০ সেমি পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: বাইম মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম বাইমে প্রায় ১১৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: বাইম মাছ জলের নিচের স্তরে থাকে এবং কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান, ছোট মাছ খেয়ে বাঁচে। ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫,০০০-১০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক বাইম উৎপাদন প্রায় ৭,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৫০০-৭০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩৩. গুঁচি/কুচো (Monopterus cuchia)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিঙ্কিফর্মেস, ফ্যামিলি – সিঙ্কিডে

বৈশিষ্ট্য: গুঁচি মাছের দেহ সাপের মতো লম্বা, পাখনা অনুপস্থিত বা খুব ছোট। দেহের রং কালচে-বাদামি বা ধূসর-বাদামি। সাধারণত ৫০-৬০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ৭০ সেমি পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: গুঁচি মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম গুঁচিতে প্রায় ১১২ ক্যালোরি শক্তি থাকে। গুঁচি মাছ আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তাল্পতা রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী।

জীবনযাপন ও প্রজনন: গুঁচি মাছ অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের কারণে স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলে বেঁচে থাকতে পারে, এমনকি কিছু সময় জলের বাইরেও থাকতে পারে। কাদামাটিতে গর্ত করে বাস করে। ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪০০-৬০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক গুঁচি উৎপাদন প্রায় ৬,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৫০০-৭০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩৪. টিংরা (Mystus tengara)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – বাগ্রিডে

বৈশিষ্ট্য: টিংরা মাছের দেহ লম্বা, টেংরার মতো, তবে কিছুটা ভিন্ন প্রজাতি। দেহ ধূসর-বাদামি, পাশে দুইটি কালো দাগ থাকে। চারটি জোড়া গোঁফ থাকে। সাধারণত ১০-১৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: টিংরা মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম টিংরায় প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: টিংরা মাছ প্রধানত রাত্রিচর, ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ১.৫-২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮,০০০-১২,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক টিংরা উৎপাদন প্রায় ৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩৫. আরি (Rita rita)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – বাগ্রিডে

বৈশিষ্ট্য: আরি মাছের দেহ লম্বা, মাথা চ্যাপ্টা ও বড়, তিনটি জোড়া গোঁফ থাকে। দেহের রং ধূসর-বাদামি বা কালচে। পাখনা শক্ত, কাঁটাযুক্ত। সাধারণত ৪০-৫০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১৫০ সেমি পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: আরি মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম আরিতে প্রায় ১২০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: আরি মাছ জলের নিচের স্তরে থাকে এবং অন্যান্য ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১৫,০০০-২৫,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক আরি উৎপাদন প্রায় ৪,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩৬. সিলভার কার্প (Hypophthalmichthys molitrix)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: সিলভার কার্প মাছের দেহ চ্যাপ্টা, প্রশস্ত। দেহের রং উজ্জ্বল রূপালী, পিঠের দিকে ঈষৎ ধূসর। চোখ নিচের দিকে অবস্থিত। আঁশ ছোট। সাধারণত ৬০-৮০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: সিলভার কার্প মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম সিলভার কার্পে প্রায় ১০৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: সিলভার কার্প জলের উপরের স্তরে থাকে এবং ফাইটোপ্লাংকটন খেয়ে বাঁচে। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১-২ মিলিয়ন ডিম পাড়ে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন করে না।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক সিলভার কার্প উৎপাদন প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ১৫০-২৫০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩৭. গ্রাস কার্প (Ctenopharyngodon idella)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: গ্রাস কার্প মাছের দেহ সিলিন্ডারাকার, প্রশস্ত। দেহের রং সবুজাভ-ধূসর, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। আঁশ বড়। সাধারণত ৬০-৮০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১.২ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: গ্রাস কার্প মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, ই, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম গ্রাস কার্পে প্রায় ১১২ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: গ্রাস কার্প জলজ উদ্ভিদ খেয়ে বাঁচে, এজন্য একে “জলের গরু” বলা হয়। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮ লক্ষ-১ মিলিয়ন ডিম পাড়ে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন করে না।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক গ্রাস কার্প উৎপাদন প্রায় ১.৫ লক্ষ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ১৮০-২৮০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩৮. বিগহেড কার্প (Aristichthys nobilis)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: বিগহেড কার্প মাছের দেহ চ্যাপ্টা, প্রশস্ত, মাথা বড়। দেহের রং কালচে-ধূসর, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। আঁশ ছোট। সাধারণত ৬০-৯০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১.৫ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: বিগহেড কার্প মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম বিগহেড কার্পে প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: বিগহেড কার্প জলের মাঝারি স্তরে থাকে এবং জুপ্লাংকটন ও ফাইটোপ্লাংকটন খেয়ে বাঁচে। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮ লক্ষ-১.২ মিলিয়ন ডিম পাড়ে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন করে না।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক বিগহেড কার্প উৎপাদন প্রায় ১ লক্ষ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ১৫০-২৫০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৩৯. মিরর কার্প (Cyprinus carpio var. specularis)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: মিরর কার্প মাছের দেহ প্রশস্ত, মোটা। সাধারণ কমন কার্প থেকে এটি ভিন্ন যে এর দেহে আঁশ আংশিকভাবে থাকে, দেহের কিছু অংশে বড় বড় আঁশ থাকে (যা দর্পণের মতো দেখায়)। দেহের রং হলুদাভ-বাদামি বা কালচে-বাদামি। সাধারণত ৫০-৭০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: মিরর কার্প মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম মিরর কার্পে প্রায় ১২৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: মিরর কার্প জলের নিচের স্তরে থাকে এবং জৈব পদার্থ, কীটপতঙ্গ, ছোট প্রাণী খেয়ে বাঁচে। ৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩ লক্ষ-৫ লক্ষ ডিম পাড়ে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন করে না।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক মিরর কার্প উৎপাদন প্রায় ৭০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ১৮০-২৮০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪০. থাই পাঙ্গাস (Pangasius sutchi)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – প্যাঙ্গাসিডে

বৈশিষ্ট্য: থাই পাঙ্গাস মাছের দেহ লম্বা, চ্যাপ্টা, মাথা ছোট। দুটি জোড়া গোঁফ আছে। দেহের রং সাদাটে-রূপালী, পিঠের দিকে ঈষৎ ধূসর। সাধারণত ৫০-৬০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: থাই পাঙ্গাস মাছে ১৫-১৭% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম থাই পাঙ্গাসে প্রায় ১০৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: থাই পাঙ্গাস মাছ সর্বভুক, জলের মাঝারি স্তরে থাকে। ৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫০,০০০-৮০,০০০ ডিম পাড়ে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন করে না।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক থাই পাঙ্গাস উৎপাদন প্রায় ৪ লক্ষ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ১০০-১৮০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে মূল্যায়ন করা হয়নি।

৪১. তিলাপিয়া (Oreochromis niloticus)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – পারসিফর্মেস, ফ্যামিলি – সিক্লিডে

বৈশিষ্ট্য: তিলাপিয়া মাছের দেহ চ্যাপ্টা, প্রশস্ত। দেহের রং ধূসর-বাদামি, লেজে লম্বালম্বি দাগ থাকে। সাধারণত ২০-৩০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ৫০ সেমি পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: তিলাপিয়া মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম তিলাপিয়ায় প্রায় ৯৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: তিলাপিয়া মাছ সর্বভুক, জলের মাঝারি স্তরে থাকে। ৬-৮ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং সারা বছর প্রজনন করতে পারে। পুরুষ মাছ মুখে ডিম সংরক্ষণ করে। একবারে প্রায় ২০০-১,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক তিলাপিয়া উৎপাদন প্রায় ৩.৫ লক্ষ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ১০০-১৮০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪২. পাঙ্গাস সুতশোরী (Pangasius sanitwongsei)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সিলুরিফর্মেস, ফ্যামিলি – প্যাঙ্গাসিডে

বৈশিষ্ট্য: পাঙ্গাস সুতশোরী দেহ লম্বা, চ্যাপ্টা, মাথা ছোট। দুটি জোড়া গোঁফ আছে। দেহের রং কালচে-ধূসর, পাশে রূপালী। সাধারণত ৭০-৯০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়, সর্বোচ্চ ২ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: পাঙ্গাস সুতশোরী মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম পাঙ্গাস সুতশোরীতে প্রায় ১১৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: পাঙ্গাস সুতশোরী মাংসাশী মাছ, জলের মাঝারি স্তরে থাকে। ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৬০,০০০-১,০০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক পাঙ্গাস সুতশোরী উৎপাদন প্রায় ২০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “এনডেঞ্জারড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪৩. ভেদা (Nandus nandus)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – পারসিফর্মেস, ফ্যামিলি – ন্যান্ডিডে

বৈশিষ্ট্য: ভেদা মাছের দেহ চ্যাপ্টা, প্রশস্ত, মুখ বড়। দেহের রং কালচে-বাদামি, গায়ে অনিয়মিত দাগ থাকে। সাধারণত ১৫-২০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: ভেদা মাছে ১৮-২০% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম ভেদায় প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: ভেদা মাছ প্রধানত মাংসাশী, ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে বাঁচে। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩,০০০-৫,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক ভেদা উৎপাদন প্রায় ৪,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪৪. পারশে (Liza parsia)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – মিউজিলিফর্মেস, ফ্যামিলি – মিউজিলিডে

বৈশিষ্ট্য: পারশে বা পারসা মাছের দেহ সিলিন্ডারাকার, মাথা চ্যাপ্টা। দেহের রং উপরে ধূসর-সবুজাভ, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। সাধারণত ১৫-২৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: পারশে মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, আয়োডিন, সেলেনিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম পারশেতে প্রায় ১১৭ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: পারশে মাছ উপকূলীয় এলাকা ও মোহনা অঞ্চলে বসবাস করে। জৈব পদার্থ ও ডেট্রাইটাস খেয়ে বাঁচে। ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং শীত মৌসুমে প্রায় ১০,০০০-১৫,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক পারশে উৎপাদন প্রায় ১২,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৪০০-৭০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪৫. সরপুঁটি (Puntius sarana)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: সরপুঁটি মাছের দেহ চ্যাপ্টা, প্রশস্ত। দেহের রং সোনালী-বাদামি, পাশে কালো দাগ থাকে। সাধারণত ২০-৩০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: সরপুঁটি মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম সরপুঁটিতে প্রায় ১১২ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: সরপুঁটি মাছ সর্বভুক, জলের মাঝারি স্তরে থাকে। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১০,০০০-১৫,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক সরপুঁটি উৎপাদন প্রায় ৮,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪৬. ভাঙ্গন (Labeo dero)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: ভাঙ্গন মাছের দেহ রুইয়ের মতো, তবে আকারে কিছুটা ছোট। দেহের রং উপরে ধূসর-বাদামি, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। ঠোঁট পুরু। সাধারণত ৩০-৪০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: ভাঙ্গন মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম ভাঙ্গনে প্রায় ১১৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: ভাঙ্গন মাছ জলের নিচের স্তরে থাকে এবং প্রধানত প্লাংকটন ও জৈব পদার্থ খায়। ৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০,০০০-৪০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক ভাঙ্গন উৎপাদন প্রায় ৭,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪৭. ফুলচেলা (Salmostoma phulo)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: ফুলচেলা মাছের দেহ লম্বা, পাতলা, চ্যাপ্টা। চেলা মাছের সাথে সাদৃশ্য আছে। দেহের রং উজ্জ্বল রূপালী, পিঠের দিকে নীলাভ আভা। সাধারণত ৭-১২ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: ফুলচেলা মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম ফুলচেলায় প্রায় ৯৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: ফুলচেলা মাছ জলের উপরের স্তরে থাকে এবং প্লাংকটন ও ছোট কীটপতঙ্গ খেয়ে বাঁচে। ১ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০০-৫০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক ফুলচেলা উৎপাদন প্রায় ৪,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪৮. জাতপুঁটি (Puntius jerdoni)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: জাতপুঁটি মাছের দেহ চ্যাপ্টা, পুঁটি মাছের চেয়ে আকারে বড়। দেহের রং সোনালী-বাদামি, পাশে কালো দাগ থাকে। সাধারণত ১৫-২০ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: জাতপুঁটি মাছে ১৭-১৯% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম জাতপুঁটিতে প্রায় ১১০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: জাতপুঁটি মাছ সর্বভুক, জলের মাঝারি স্তরে থাকে। ১.৫-২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮,০০০-১২,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক জাতপুঁটি উৎপাদন প্রায় ৬,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২৫০-৪০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “ভালনারেবল” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৪৯. টাটকিনি (Cirrhinus reba)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: টাটকিনি মাছের দেহ চ্যাপ্টা, মৃগেলের সাথে সাদৃশ্য আছে তবে আকারে ছোট। দেহের রং উপরে ধূসর-বাদামি, পাশে রূপালী, পেট সাদাটে। সাধারণত ২০-২৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: টাটকিনি মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম টাটকিনিতে প্রায় ১০৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: টাটকিনি মাছ জলের নিচের স্তরে থাকে এবং প্রধানত জৈব পদার্থ ও ডেট্রাইটাস খায়। ২ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ২০,০০০-৩০,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক টাটকিনি উৎপাদন প্রায় ১০,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “নিয়ার থ্রেটেনড” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

৫০. ঢেলা (Osteobrama cotio)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: অর্ডার – সাইপ্রিনিফর্মেস, ফ্যামিলি – সাইপ্রিনিডে

বৈশিষ্ট্য: ঢেলা মাছের দেহ চ্যাপ্টা, প্রশস্ত, মোলার মতো দেখতে তবে আকারে বড়। দেহের রং রূপালী, পিঠের দিকে ধূসর। সাধারণত ১০-১৫ সেমি দৈর্ঘ্য হয়।

স্বাদ ও পুষ্টিমান: ঢেলা মাছে ১৬-১৮% প্রোটিন, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম ঢেলায় প্রায় ১০০ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

জীবনযাপন ও প্রজনন: ঢেলা মাছ জলের মাঝারি স্তরে থাকে এবং প্রধানত প্লাংকটন খায়। ১.৫ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫,০০০-৮,০০০ ডিম পাড়ে।

চাষ ও বাণিজ্যিক তথ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক ঢেলা উৎপাদন প্রায় ৫,০০০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা।

সংরক্ষণ অবস্থা: আইইউসিএন রেড লিস্টে “লিস্ট কনসার্ন” হিসেবে তালিকাভুক্ত।

এই ৫০টি মাছের তালিকায় বাংলাদেশের মিঠা পানির, লবণাক্ত পানির এবং উভয় এলাকার মাছ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই মাছগুলো বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে অনেক প্রজাতি ইতিমধ্যে বিলুপ্তির পথে, যা আমাদের জৈববৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। মাছের বিবিধতা সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য চাষ প্রচারের মাধ্যমে এই মূল্যবান জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button