বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৎস্য খাত জিডিপিতে ২.৪৩%, কৃষি জিডিপিতে ২২.১৪% এবং মোট জাতীয় রপ্তানিতে ১.০৫% অবদান রাখছে। এই ক্রমবর্ধমান খাতে মাছ চাষ লোন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারি ও বেসরকারি বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান মৎস্য চাষীদের জন্য সুবিধাজনক সুদের হারে ঋণ প্রদান করছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে এবং হিলসা উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। এই সাফল্যের পেছনে মাছ চাষ লোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের এই বিস্তারিত গাইডে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে মাছ চাষের জন্য ঋণ পেতে পারেন, কোন ব্যাংক থেকে, কত সুদে এবং কী প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হবে।
মাছ চাষ লোন কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মাছ চাষ লোনের সংজ্ঞা
মাছ চাষ লোন হলো একটি বিশেষায়িত কৃষি ঋণ যা মৎস্য চাষের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য প্রদান করা হয়। এই ঋণ পুকুর খনন, পুনরায় খনন, মৎস্য হ্যাচারি স্থাপন, চিংড়ি চাষ, মাছের খাদ্য ক্রয় এবং অন্যান্য মৎস্য চাষ সংক্রান্ত খরচের জন্য ব্যবহার করা যায়।
গুরুত্বের কারণসমূহ
মাছ চাষ লোনের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ:
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: বাংলাদেশে দৈনিক মাথাপিছু মাছের চাহিদা ৬০ গ্রাম কিন্তু বর্তমান সরবরাহ ৬৭.৮ গ্রাম, যা মাছ চাষ লোনের বদল্যে সম্ভব হয়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি: প্রায় ১৯.৫ মিলিয়ন মানুষ মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, যার মধ্যে ১.৪ মিলিয়ন নারী।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: মৎস্য খাত থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৫.৭৪% অর্জিত হচ্ছে।
মাছ চাষ লোনের ইতিহাস ও উৎপত্তি
প্রাথমিক পর্যায় (১৯৭০-১৯৯০)
বাংলাদেশে মাছ চাষ লোনের ইতিহাস স্বাধীনতার পরপরই শুরু। ১৯৭৫ সালে প্রথম কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মৎস্য চাষের জন্য আনুষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা চালু হয়।
আধুনিকায়নের যুগ (১৯৯০-২০১০)
এই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোও মৎস্য চাষ ঋণ প্রদান শুরু করে। ১৯৯০ সালের পর খামার-বান্ধব নীতি প্রণয়নের ফলে মাছ এবং ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান যুগ (২০১০-২০২৫)
২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে চাষকৃত মাছের উৎপাদন ১.২ মিলিয়ন টন থেকে ২.১৭ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে, যা মাছ চাষ লোনের সফল বাস্তবায়নের প্রমাণ।
মাছ চাষ লোনের প্রকারভেদ
১. পুকুর ভিত্তিক ঋণ
নতুন পুকুর খনন: সম্পূর্ণ নতুন পুকুর খনন করে মাছ চাষের জন্য।
পুরাতন পুকুর পুনঃখনন: পুরাতন/পরিত্যক্ত ট্যাংক পুনরায় খনন করে মাছ চাষের জন্য ঋণ।
বিদ্যমান পুকুরে চাষ: বিদ্যমান পুকুর/ট্যাংকে মাছ চাষের জন্য ঋণ।
২. মাছের প্রজাতি ভিত্তিক ঋণ
মাছের ধরন | ঋণের পরিমাণ | বিশেষত্ব |
---|---|---|
কার্প জাতীয় মাছ (রুই, কাতলা) | ১০,০০০ – ২,০০,০০০ টাকা | সর্বনিম্ন আধাবিঘা থেকে দশ-পনের হাজার টাকা |
পাঙ্গাস চাষ | ৫০,০০০ – ৫,০০,০০০ টাকা | দ্রুত বৃদ্ধিশীল প্রজাতি |
তেলাপিয়া চাষ | ২৫,০০০ – ৩,০০,০০০ টাকা | উচ্চ বাজার চাহিদা |
চিংড়ি চাষ | ৫০,০০০ – ২০,০০,০০০ টাকা | রপ্তানিমুখী চাষ |
৩. চাষ পদ্ধতি ভিত্তিক ঋণ
ঐতিহ্যগত চাষ: প্রথাগত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য ঋণ।
বৈজ্ঞানিক চাষ: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য ঋণ।
আধা-নিবিড় চাষ: আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য ঋণ।
৪. হ্যাচারি ঋণ
মৎস্য ও চিংড়ি হ্যাচারি (ফিঙ্গারলিংস উৎপাদন) এর জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা উপলব্ধ।
মাছ চাষ লোনের উপকারিতা ও অসুবিধা
উপকারিতাসমূহ
১. সহজ শর্তাবলী
- সুদের হার মাত্র ৮%
- ১.৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোন জামানত প্রয়োজন নেই
- নমনীয় পরিশোধের সময়সূচী
২. বিভিন্ন ব্যাংকের সুবিধা
- সরকারি ব্যাংক: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক
- বেসরকারি ব্যাংক: বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক
- বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান: সমবায় ব্যাংক
৩. সরকারি সহায়তা
- বাংলাদেশ ব্যাংক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ সহায়তা কর্মসূচী (১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়) ৮% সরল সুদে
- কৃষি ভর্তুকি সুবিধা
৪. প্রযুক্তিগত সহায়তা
- মৎস্য অধিদপ্তরের পরামর্শ সেবা
- আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ
অসুবিধাসমূহ
১. কাগজপত্রের জটিলতা
- অনেক ডকুমেন্ট প্রয়োজন
- দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়া
২. ভূগোলিক সীমাবদ্ধতা
- সব এলাকায় সমান সুবিধা নেই
- দূরবর্তী এলাকায় ব্যাংক শাখা কম
৩. বাজার ঝুঁকি
- মাছের দাম ওঠানামা
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি
মাছ চাষ লোন সম্পর্কে বিস্তারিত গাইড
আবেদনের পূর্বশর্ত
১. ব্যক্তিগত যোগ্যতা
- বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে
- বয়স ১৮-৬০ বছরের মধ্যে
- শাখার অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
২. জমির মালিকানা
- নিজস্ব জমি অথবা দীর্ঘমেয়াদী লিজ
- জমির দলিল সঠিক থাকতে হবে
৩. প্রযুক্তিগত জ্ঞান
- মাছ চাষ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা
- প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের ইচ্ছা
আবেদন প্রক্রিয়া
ধাপ ১: প্রাথমিক প্রস্তুতি
- প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করুন
- জেলা মৎস্য অধিদপ্তরে প্রকল্প জমা দিন
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন
ধাপ ২: ব্যাংকে আবেদন
- নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করুন
- সরাসরি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক/কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন
- আবেদনপত্র পূরণ করুন
ধাপ ৩: যাচাই-বাছাই
- ব্যাংক কর্মকর্তার সাইট ভিজিট
- প্রকল্প মূল্যায়ন
- ঋণ অনুমোদন
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যক্তিগত কাগজপত্র
- জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্ট কার্ড
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৩ কপি)
- ট্রেড লাইসেন্স (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র
- জমির দাগ নম্বর ও মৌজা
- খতিয়ান/পর্চা
- জমির দলিল
প্রকল্প সংক্রান্ত কাগজপত্র
- বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাব
- আনুমানিক খরচের হিসাব
- মৎস্য অধিদপ্তরের সুপারিশ
ঋণের পরিমাণ ও শর্তাবলী
ঋণের সীমা
চাষের ধরন | সর্বনিম্ন | সর্বোচ্চ |
---|---|---|
পারিবারিক পুকুর | ১০,০০০ টাকা | ৫০,০০০ টাকা |
বাণিজ্যিক চাষ | ১,০০,০০০ টাকা | ২ কোটি টাকা |
হ্যাচারি প্রকল্প | ৫,০০,০০০ টাকা | ১ কোটি টাকা |
সুদের হার
- বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মসূচী: ৮% (সরল)
- সাধারণ মৎস্য ঋণ: ৮%
- বিশেষ কর্মসূচী: ৭-৯%
পরিশোধের মেয়াদ
- স্বল্পমেয়াদী: ১-২ বছর
- মধ্যমেয়াদী: ৩-৫ বছর
- দীর্ঘমেয়াদী: ৫-১০ বছর
বিভিন্ন ব্যাংকের সুবিধা
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
- মৎস্য চাষ, চিংড়ি চাষ এবং মৎস্য হ্যাচারি স্থাপনের জন্য বিশেষায়িত ঋণ
- দেশব্যাপী বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক
- কৃষক-বান্ধব নীতি
কর্মসংস্থান ব্যাংক
- কার্প জাতীয়, পাংগাস, চিংড়ি, মনোসেক্স তেলাপিয়া, থাই কৈ, মিশ্র মৎস্য চাষ ও রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য ঋণ
- বেকার যুবদের জন্য বিশেষ সুবিধা
- সহজ আবেদন প্রক্রিয়া
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ
- প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার
- দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া
- আধুনিক ব্যাংকিং সেবা
মাছ চাষ লোনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা
২০২৪ সালে বাংলাদেশের অ্যাকুয়াকালচার বাজারের আকার ২.৮ মিলিয়ন টন এবং ২০৩৩ সালের মধ্যে ৪.০ মিলিয়ন টনে পৌঁছানোর প্রত্যাশা, যা ৩.৭% বৃদ্ধির হার নির্দেশ করে।
সরকারি পরিকল্পনা
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৫ লক্ষ টন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৮৫ লক্ষ টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
- বায়োফ্লক প্রযুক্তি
- রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম (RAS)
- স্মার্ট ফিডিং সিস্টেম
রপ্তানির সম্ভাবনা
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ জলজ পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। ভবিষ্যতে এই আয় আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে মাছ চাষ লোনের অবস্থা
বর্তমান পরিস্থিতি
উৎপাদন পরিসংখ্যান
- ২০২৩-২৪ মৌসুমে মাছ উৎপাদন ৫০.২ লক্ষ টন
- গত দশকে চাষকৃত মাছের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে
জনসংখ্যার সম্পৃক্ততা
- প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যক্তি মাছ চাষ এবং এর বিস্তৃত মূল্য শৃঙ্খলে নিয়োজিত
- গ্রামীণ ও শহরতলী এলাকায় অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি
প্রধান মাছের প্রজাতি পাঙ্গাস, তেলাপিয়া এবং গাঙ্গেয় কই মাছের চাষে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পাঙ্গাসের বার্ষিক উৎপাদন ২০১০-১১ সালে ১৫৫,০০০ টন থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৯৫,০০০ টনে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চ্যালেঞ্জসমূহ
আর্থিক চ্যালেঞ্জ
- ক্ষুদ্র চাষীদের আনুষ্ঠানিক ঋণের অভাব এবং উচ্চ সুদের হার
- MFI প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হওয়া
প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ
- আধুনিক চাষ পদ্ধতির অভাব
- উন্নত খাদ্য ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতা
সরকারি উদ্যোগ
নীতিগত সহায়তা
- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খামার-বান্ধব নীতি বাস্তবায়ন করছে
- কৃষক-বান্ধব ঋণ নীতিমালা প্রণয়ন
প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা
- মৎস্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ সেবা
- মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম
মাছ চাষ লোন নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা
ভুল ধারণা ১: জটিল প্রক্রিয়া
প্রচলিত ধারণা: মাছ চাষ লোন পেতে অনেক জটিল প্রক্রিয়া।
সঠিক তথ্য: সরাসরি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক/কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলেই হয়। কোনো তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নেয়া যাবে না।
ভুল ধারণা ২: উচ্চ সুদের হার
প্রচলিত ধারণা: মাছ চাষ লোনের সুদের হার অনেক বেশি।
সঠিক তথ্য: সরকারি কর্মসূচীতে সুদের হার মাত্র ৮% (সরল)।
ভুল ধারণা ৩: ছোট চাষীদের জন্য নয়
প্রচলিত ধারণা: শুধু বড় খামারিরা ঋণ পেতে পারেন।
সঠিক তথ্য: আধাবিঘা পুকুরের জন্যও দশ থেকে পনের হাজার টাকা ঋণ পাওয়া যায়।
ভুল ধারণা ৪: জামানত আবশ্যক
প্রচলিত ধারণা: সব ঋণের জন্য জামানত দিতে হয়।
সঠিক তথ্য: ১.৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোন জামানত প্রয়োজন নেই।
ভুল ধারণা ৫: শুধু পুরুষদের জন্য
প্রচলিত ধারণা: মহিলারা মাছ চাষ ঋণ পেতে পারেন না।
সঠিক তথ্য: মহিলা গ্রুপ, স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী এবং যৌথ দায়বদ্ধতা গ্রুপ সকলেই যোগ্য।
সফল মাছ চাষ প্রকল্পের উদাহরণ
কেস স্টাডি ১: পাঙ্গাস চাষে সাফল্য
ময়মনসিংহ বিভাগে ১১২,০০০ মাছ চাষী রয়েছেন, যারা বেশিরভাগই ত্রিশাল, গৌরীপুর, ফুলপুর, তারাকান্দা, ভালুকা এবং মুক্তাগাছা উপজেলায়। এই এলাকার চাষীরা মাছ চাষ লোনের সদ্ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন।
কেস স্টাডি ২: কই মাছ চাষের উন্নতি
২০০৩ সাল থেকে থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জাতের ব্রুডস্টক আনার পর কই মাছের গড় আকার দ্বিগুণ হয়েছে এবং সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেস স্টাডি ৩: তেলাপিয়া চাষের সম্প্রসারণ
তেলাপিয়ার উৎপাদন ৯৮,০০০ টন থেকে ৩২৯,০০০ টনে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত মাছ চাষ লোনের কার্যকর ব্যবহারের ফল।
আধুনিক প্রযুক্তি ও মাছ চাষ লোন
বায়োফ্লক প্রযুক্তি
এই উন্নত প্রযুক্তিতে মাছ চাষের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা উপলব্ধ।
RAS (রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম)
আধুনিক এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য উচ্চতর ঋণ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্মার্ট ফিডিং সিস্টেম
স্বয়ংক্রিয় খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য প্রযুক্তি ঋণ পাওয়া যায়।
পরিবেশ বান্ধব মাছ চাষ ও ঋণ সুবিধা
জৈব মাছ চাষ
রাসায়নিক মুক্ত মাছ চাষের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা।
সমন্বিত চাষ ব্যবস্থা
ধানক্ষেতে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি সহ মাছ চাষের জন্য সমন্বিত ঋণ।
জলবায়ু স্মার্ট মাছ চাষ
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো চাষ পদ্ধতির জন্য বিশেষ সহায়তা।
মাছ চাষ লোনের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা
ডিজিটাল ব্যাংকিং
অনলাইনে ঋণ আবেদন ও অনুমোদন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা
দূরবর্তী এলাকার চাষীদের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা সম্প্রসারণ।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি
স্বচ্ছ ও নিরাপদ ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
মাছ চাষ লোনের জন্য সর্বনিম্ন জমির পরিমাণ কত?
আধাবিঘা পুকুরের জন্যও ঋণ পাওয়া যায়, যার পরিমাণ দশ থেকে পনের হাজার টাকা।
মাছ চাষ লোনের সুদের হার কত?
বাংলাদেশ ব্যাংক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ সহায়তা কর্মসূচীতে সুদের হার ৮% (সরল)।
কোন কোন ব্যাংক থেকে মাছ চাষ লোন পাওয়া যায়?
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে মাছ চাষ লোন পাওয়া যায়।
জামানত ছাড়া কত টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়?
১.৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোন জামানত প্রয়োজন নেই।
মহিলারা কি মাছ চাষ লোন পেতে পারেন?
হ্যাঁ, মহিলা গ্রুপ, স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী এবং যৌথ দায়বদ্ধতা গ্রুপ সকলেই মাছ চাষ লোনের জন্য যোগ্য।
চিংড়ি চাষের জন্য কী ধরনের ঋণ সুবিধা আছে?
প্রথাগত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ এবং আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য আলাদা ঋণ সুবিধা রয়েছে।
পুকুর পুনঃখননের জন্য ঋণ পাওয়া যায় কি?
হ্যাঁ, পুরাতন/পরিত্যক্ত ট্যাংক পুনরায় খনন করে মাছ চাষের জন্য ঋণ পাওয়া যায়।
হ্যাচারি স্থাপনের জন্য কত টাকা ঋণ পাওয়া যায়?
হ্যাচারি স্থাপনের জন্য ৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়।
ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কত?
চাষের ধরন অনুযায়ী ১ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত পরিশোধের সময় পাওয়া যায়।
কৃষি ভর্তুকি কি মাছ চাষেও পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মাছ চাষেও কৃষি ভর্তুকি পাওয়া যায়।
উপসংহার
মাছ চাষ লোন বাংলাদেশের মৎস্য খাতের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বাংলাদেশ বর্তমানে স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, যা মূলত কার্যকর ঋণনীতির ফসল। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো সুবিধাজনক শর্তে মাছ চাষের জন্য ঋণ প্রদান করছে।
আমাদের এই বিস্তারিত গাইড অনুসরণ করে আপনি সহজেই মাছ চাষ লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, ১.৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোন জামানত প্রয়োজন নেই এবং সুদের হার মাত্র ৮%।
মূল কথা: মাছ চাষ লোন নিয়ে আর কোনো দ্বিধা নেই। সঠিক তথ্য, যথাযথ প্রস্তুতি এবং সততার সাথে আবেদন করলে আপনিও মাছ চাষে সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
Leave a Reply