মাছ ধরার কারেন্ট জাল : সম্পূর্ণ গাইড ও পরিবেশগত প্রভাব

আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-দীঘিতে মাছ ধরার ঐতিহ্য সহস্র বছরের পুরানো। যুগে যুগে মৎস্যজীবীরা বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তবে আধুনিক যুগে এসে মাছ ধরার পদ্ধতিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তার মধ্যে একটি হলো কারেন্ট জাল বা বৈদ্যুতিক জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা।

কারেন্ট জাল হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে পানিতে নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক প্রবাহ পাঠিয়ে মাছকে অজ্ঞান করে তোলা হয় এবং পরবর্তীতে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়। এই পদ্ধতিটি যদিও কার্যকর, তবে এর পরিবেশগত প্রভাব এবং আইনি জটিলতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।

কারেন্ট জাল কী এবং এর কার্যপ্রণালী

কারেন্ট জালের সংজ্ঞা

কারেন্ট জাল বা ইলেকট্রো ফিশিং হলো একটি মৎস্য আহরণ পদ্ধতি যেখানে পানিতে নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক শক প্রয়োগ করে মাছকে সাময়িকভাবে অবশ করে ফেলা হয়। এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় যা ব্যাটারি বা জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে পানিতে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে।

কার্যপ্রণালীর বিস্তারিত

কারেন্ট জালের কার্যপ্রণালী বেশ জটিল। এতে দুটি প্রধান উপাদান থাকে:

১. পাওয়ার সোর্স: সাধারণত ১২ ভোল্ট ডিসি ব্যাটারি বা ছোট জেনারেটর ব্যবহার করা হয়।

২. ইলেকট্রোড সিস্টেম: এতে একটি পজিটিভ এবং একটি নেগেটিভ ইলেকট্রোড থাকে যা পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

যখন এই সিস্টেম চালু করা হয়, তখন দুই ইলেকট্রোডের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা মাছেরা সাময়িকভাবে অজ্ঞান হয়ে যায় বা তাদের চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই সময়ে তাদের সহজেই ধরা যায়।

বৈদ্যুতিক প্রভাবের বিজ্ঞান

মাছের শরীরে বৈদ্যুতিক প্রবাহের প্রভাব তিনটি স্তরে ঘটে:

গ্যালভানোট্যাক্সিস: কম ভোল্টেজে মাছ পজিটিভ ইলেকট্রোডের দিকে আকৃষ্ট হয়।

গ্যালভানোনার্কোসিস: মাঝারি ভোল্টেজে মাছ অজ্ঞান হয়ে যায় কিন্তু বেঁচে থাকে।

ইলেকট্রোকিউশন: অতিরিক্ত ভোল্টেজে মাছ মারা যায়।

কারেন্ট জালের ইতিহাস ও বিকাশ

বিশ্বব্যাপী ইতিহাস

ইলেকট্রো ফিশিং এর ইতিহাস ১৯শ শতাব্দীতে ফিরে যায়। ১৮৬৩ সালে জার্মান বিজ্ঞানী হেনরি হিবার্ট প্রথম বৈদ্যুতিক প্রবাহ ব্যবহার করে মাছ ধরার পরীক্ষা চালান। ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে রাশিয়া এবং জার্মানিতে এই পদ্ধতির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়।

বাংলাদেশে আগমন

বাংলাদেশে কারেন্ট জাল ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট ইতিহাস জানা না গেলেও, ধারণা করা হয় ১৯৯০ এর দশকে এই পদ্ধতি প্রবেশ করে। প্রাথমিকভাবে হালদা, পদ্মা এবং মেঘনা নদীতে এর ব্যবহার দেখা যায়।

আধুনিক উন্নতি

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের কারেন্ট জালের যন্ত্র পাওয়া যায়:

  • পোর্টেবল ডিভাইস (ওজন ৫-১০ কেজি)
  • বোট মাউন্টেড সিস্টেম
  • হ্যান্ড হেল্ড ইকুইপমেন্ট

কারেন্ট জালের প্রকারভেদ

শক্তির উৎস অনুযায়ী

ধরন শক্তির উৎস ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্র
ব্যাটারি চালিত ১২V DC ব্যাটারি ৫০-২০০ ওয়াট ছোট জলাশয়
জেনারেটর চালিত পেট্রোল জেনারেটর ৫০০-২০০০ ওয়াট বড় নদী
সোলার চালিত সোলার প্যানেল ১০০-৫০০ ওয়াট দূরবর্তী এলাকা

আকার অনুযায়ী

ছোট আকারের যন্ত্র:

  • ওজন: ৩-৫ কেজি
  • ক্ষমতা: ৫০-১০০ ওয়াট
  • ব্যবহারকারী: ১-২ জন
  • এলাকা: ছোট পুকুর, খাল

মাঝারি আকারের যন্ত্র:

  • ওজন: ৮-১৫ কেজি
  • ক্ষমতা: ২০০-৫০০ ওয়াট
  • ব্যবহারকারী: ২-৩ জন
  • এলাকা: মাঝারি নদী, বিল

বড় আকারের যন্ত্র:

  • ওজন: ২০-৫০ কেজি
  • ক্ষমতা: ১০০০-৩০০০ ওয়াট
  • ব্যবহারকারী: ৩-৫ জন
  • এলাকা: বড় নদী, সমুদ্র উপকূল

বাংলাদেশে কারেন্ট জালের বর্তমান অবস্থা

ব্যবহারের পরিসংখ্যান

মৎস্য অধিদপ্তরের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১৮ লক্ষ মৎস্যজীবী রয়েছেন। এর মধ্যে আনুমানিক ৫-৮% কোনো না কোনো সময় কারেন্ট জাল ব্যবহার করেছেন।

আঞ্চলিক বিতরণ

উচ্চ ব্যবহারের এলাকা:

  • রাজশাহী বিভাগ: পদ্মা নদী অববাহিকা
  • রংপুর বিভাগ: তিস্তা নদী
  • সিলেট বিভাগ: সুরমা-কুশিয়ারা নদী

মাঝারি ব্যবহারের এলাকা:

  • বরিশাল বিভাগ: মেঘনা-পদ্মা সঙ্গমস্থল
  • চট্টগ্রাম বিভাগ: কর্ণফুলী নদী

অর্থনৈতিক প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে, কারেন্ট জাল ব্যবহারকারী একজন জেলে দৈনিক গড়ে ৮০০-১৫০০ টাকার মাছ ধরতে পারেন, যা ঐতিহ্যগত পদ্ধতির তুলনায় ৩-৪ গুণ বেশি।

পরিবেশগত প্রভাব

নেতিবাচক প্রভাব

জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি: কারেন্ট জাল ব্যবহারের ফলে নির্বিচারে সব ধরনের মাছ ধরা পড়ে। এতে ছোট মাছ, মাছের পোনা এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছেরও ক্ষতি হয়।

প্রজনন ব্যাহত: বৈদ্যুতিক শক মাছের প্রজনন ক্ষমতায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, একবার বৈদ্যুতিক শক পাওয়া মাছের প্রজনন ক্ষমতা ৩০-৪০% কমে যায়।

জলজ পরিবেশ দূষণ: অনেক সময় কারেন্ট জালের যন্ত্র থেকে তেল বা রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে পরিবেশ দূষণ করে।

পরিবেশগত ক্ষতির পরিসংখ্যান

প্রভাবের ধরন ক্ষতির পরিমাণ সূত্র
মাছের পোনা মৃত্যু ৬০-৮০% মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট
প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ৩০-৪০% বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
জীববৈচিত্র্য হ্রাস ২৫-৩৫% IUCN বাংলাদেশ

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

মৎস্য সম্পদ হ্রাস: অতিরিক্ত কারেন্ট জাল ব্যবহারের ফলে অনেক এলাকায় মাছের মজুদ ৫০-৭০% পর্যন্ত কমে গেছে।

পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট: জলজ খাদ্য শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটার ফলে পুরো পরিবেশতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

আইনি দিক ও নিয়ন্ত্রণ

বাংলাদেশের আইন

মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩: এই অধ্যাদেশের ৪৭ ধারা অনুযায়ী, বিষ বা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। যদিও সরাসরি কারেন্ট জালের উল্লেখ নেই, তবে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি এই ধারার আওতায় পড়ে।

মৎস্য আইন ২০২০: নতুন মৎস্য আইনে কারেন্ট জাল ব্যবহার সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনের ২৮ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

শাস্তির বিধান

অপরাধের ধরন শাস্তি জরিমানা
প্রথমবার ৬ মাস কারাদণ্ড ৫০,০০০ টাকা
দ্বিতীয়বার ১ বছর কারাদণ্ড ১,০০,০০০ টাকা
তৃতীয়বার ২ বছর কারাদণ্ড ২,০০,০০০ টাকা

আইন প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ

জনবল সংকট: মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে মাত্র ৮৫০ জন ফিশারিজ অফিসার রয়েছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত।

প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ: দেশের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিয়মিত উপস্থিতি নেই, ফলে কারেন্ট জাল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

মৎস্যজীবী সমাজে প্রভাব

আয় বৃদ্ধি: স্বল্পমেয়াদে কারেন্ট জাল ব্যবহারকারীদের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। গড়ে একজন জেলে মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করতে পারেন।

সামাজিক বিভক্তি: কারেন্ট জাল ব্যবহারকারী এবং ঐতিহ্যগত পদ্ধতি অনুসরণকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় এই নিয়ে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

বাজারে প্রভাব

মাছের দাম: কারেন্ট জাল দিয়ে ধরা মাছ বাজারে সাধারণত কম দামে বিক্রি হয়। এর ফলে সামগ্রিকভাবে মাছের বাজারদর কমে যাচ্ছে।

সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন: অনেক ক্রেতা কারেন্ট জাল দিয়ে ধরা মাছ কিনতে চান না, ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

জীবিকার বিকল্প

দক্ষতা উন্নয়ন: সরকার ও বিভিন্ন এনজিও মৎস্যজীবীদের বিকল্প পেশায় দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

মাছ চাষে উৎসাহ: কারেন্ট জাল ব্যবহারকারীদের মাছ চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকার এজন্য বিশেষ ঋণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে।

বিকল্প মৎস্য আহরণ পদ্ধতি

টেকসই মাছ ধরার পদ্ধতি

ঐতিহ্যগত জাল:

  • বেড় জাল
  • ফাঁস জাল
  • ঘেরা জাল
  • পোনা জাল

আধুনিক পদ্ধতি:

  • সেলেক্টিভ ফিশিং গিয়ার
  • ইকো-ফ্রেন্ডলি ট্র্যাপ
  • জৈবিক পদ্ধতি

প্রযুক্তিগত উন্নতি

GPS ভিত্তিক মাছ ধরা: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছের অবস্থান নির্ধারণ করে টার্গেটেড ফিশিং।

ইকো সাউন্ডার: পানির নিচে মাছের উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার।

বায়োডিগ্রেডেবল জাল: পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে তৈরি জাল যা পরিবেশের ক্ষতি করে না।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

গবেষণা ও উন্নয়ন

বৈজ্ঞানিক গবেষণা: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কারেন্ট জালের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালাচ্ছে।

প্রযুক্তিগত উন্নতি: নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কম ক্ষতিকর বৈদ্যুতিক পদ্ধতি উন্নয়নের গবেষণা চলছে।

নীতিমালা প্রণয়ন

জাতীয় মৎস্য নীতি: সরকার একটি সমন্বিত মৎস্য নীতি প্রণয়নের কাজ করছে যেখানে কারেন্ট জাল নিয়ন্ত্রণের বিশেষ দিকনির্দেশনা থাকবে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: FAO এবং World Bank এর সাথে যৌথভাবে টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

শিক্ষা ও সচেতনতা

মৎস্যজীবী প্রশিক্ষণ: সারাদেশে মৎস্যজীবীদের টেকসই মাছ ধরার পদ্ধতি শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু হয়েছে।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি: গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারেন্ট জালের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন ১: কারেন্ট জাল কি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ?

উত্তর: হ্যাঁ, বাংলাদেশের মৎস্য আইন ২০২০ অনুযায়ী কারেন্ট জাল ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এর ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় এবং পরিবহন সবই আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

প্রশ্ন ২: কারেন্ট জাল ব্যবহারের শাস্তি কী?

উত্তর: প্রথমবার ধরা পড়লে ৬ মাস কারাদণ্ড বা ৫০,০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। পরবর্তী অপরাধে শাস্তি আরও কঠোর।

প্রশ্ন ৩: কারেন্ট জাল দিয়ে ধরা মাছ খাওয়া কি নিরাপদ?

উত্তর: বৈদ্যুতিক শক পাওয়া মাছের মাংসে তাৎক্ষণিক কোনো বিষাক্ততা নেই। তবে এই মাছেরা সাধারণত স্ট্রেসড অবস্থায় মারা যায়, ফলে মাংসের গুণগত মান কমে যায়।

প্রশ্ন ৪: কারেন্ট জালের বিকল্প কী?

উত্তর: ঐতিহ্যগত জাল (বেড় জাল, ফাঁস জাল), আধুনিক ট্র্যাপ, হুক অ্যান্ড লাইন, এবং নিয়ন্ত্রিত জলাশয়ে মাছ চাষ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ৫: কারেন্ট জাল ব্যবহারের খবর দিলে কোথায় যোগাযোগ করব?

উত্তর: স্থানীয় উপজেলা মৎস্য অফিস, থানা বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া মৎস্য অধিদপ্তরের হটলাইন নম্বর ৯৯৯ এ কল করতে পারেন।

প্রশ্ন ৬: গবেষণার জন্য কি কারেন্ট জাল ব্যবহার করা যায়?

উত্তর: বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বিশেষ অনুমতি নিয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এজন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।

প্রশ্ন ৭: অন্যান্য দেশে কারেন্ট জালের অবস্থা কেমন?

উত্তর: বেশিরভাগ উন্নত দেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও মৎস্য জরিপের জন্য নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার অনুমোদিত। তবে বাণিজ্যিক মাছ ধরার জন্য এর ব্যবহার সর্বত্রই নিষিদ্ধ।

প্রশ্ন ৮: কারেন্ট জাল সনাক্ত করার উপায় কী?

উত্তর: সাধারণত এই যন্ত্রে ব্যাটারি, তার, এবং ধাতব রড থাকে। পানিতে ব্যবহারের সময় অস্বাভাবিক শব্দ এবং মাছের অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়।

উপসংহার

মাছ ধরার কারেন্ট জাল একটি জটিল বিষয় যা আমাদের দেশের মৎস্য সম্পদ এবং পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি। যদিও এই পদ্ধতিতে স্বল্পমেয়াদে বেশি মাছ ধরা সম্ভব, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমাদের নদী-নালা, খাল-বিল থেকে মাছ প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পেছনে কারেন্ট জালের ব্যবহার একটি প্রধান কারণ।

সরকার যদিও এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ করেছে এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে, তবুও এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মৎস্যজীবীদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেবল এই সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব।

আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মৎস্য সম্পদ রক্ষা করতে হলে আজই কারেন্ট জালের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। একসাথে কাজ করলে আমরা আমাদের জলাশয়ে আবার মাছের প্রাচুর্য ফিরিয়ে আনতে পারি এবং মৎস্যজীবী সমাজের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারি।

আসুন, আমরা সবাই মিলে কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে এবং টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনার পক্ষে অবস্থান নিই। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির নদী-নালায় আবার মাছের কলকাকলি ফিরিয়ে আনার এই মহান কাজে প্রত্যেকেরই ভূমিকা রয়েছে।

Leave a Comment