মাছ চাষে সফলতার নির্ভরযোগ্য সঙ্গী

রুই মাছের ক্লিভেজ কোন ধরনের

Published:

Updated:

প্রাণীজগতের বিকাশ প্রক্রিয়া একটি জটিল ও অত্যাশ্চর্য ঘটনা। যখন একটি ছোট্ট নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর জন্ম হয়, তখন এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ বিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার বিষয়। মাছের ভ্রূণ বিকাশ, বিশেষ করে রুই মাছের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রুই মাছ আমাদের দেশের একটি প্রধান মৎস্য সম্পদ।

রুই মাছের ভ্রূণ বিকাশের প্রথম ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ক্লিভেজ (Cleavage)। এই প্রক্রিয়ায় নিষিক্ত ডিম্বাণু বিভক্ত হয়ে একাধিক কোষে পরিণত হয়। রুই মাছের ক্ষেত্রে এই ক্লিভেজ একটি বিশেষ ধরনের, যা মেরোব্লাস্টিক (Meroblastic) ক্লিভেজ নামে পরিচিত। আজকের এই নিবন্ধে আমরা রুই মাছের ক্লিভেজের ধরন, এর বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

রুই মাছ পরিচিতি

রুই মাছ (Labeo rohita) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিঠা পানির মাছ। এটি কার্প (Carp) পরিবারের অন্তর্গত এবং বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Labeo rohita এবং এটি Cyprinidae পরিবারের সদস্য।

রুই মাছের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:

  • আকার: পূর্ণবয়স্ক রুই মাছ ৬০-৯০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে
  • ওজন: সাধারণত ২-৫ কেজি, তবে কিছু ক্ষেত্রে ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে
  • জীবনকাল: প্রাকৃতিক পরিবেশে ১৫-২০ বছর
  • প্রজনন: সাধারণত ২-৩ বছর বয়সে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে

ক্লিভেজ কী?

ক্লিভেজ হলো ভ্রূণ বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে নিষিক্ত ডিম্বাণুর ক্রমাগত বিভাজন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় জাইগোট (নিষিক্ত ডিম্বাণু) মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে ছোট ছোট কোষে বিভক্ত হয়, যাদের ব্লাস্টোমিয়ার (Blastomere) বলা হয়।

ক্লিভেজের প্রকারভেদ

ক্লিভেজ প্রধানত দুই ধরনের:

১. হলোব্লাস্টিক ক্লিভেজ (Holoblastic Cleavage)

  • সম্পূর্ণ ডিম্বাণু বিভক্ত হয়
  • কম কুসুমযুক্ত ডিমে দেখা যায়
  • উদাহরণ: স্তন্যপায়ী প্রাণী, উভচর প্রাণী

২. মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ (Meroblastic Cleavage)

  • ডিম্বাণুর একটি অংশ বিভক্ত হয়
  • অধিক কুসুমযুক্ত ডিমে দেখা যায়
  • উদাহরণ: মাছ, পাখি, সরীসৃপ

রুই মাছের ক্লিভেজের ধরন

রুই মাছের ক্লিভেজ মেরোব্লাস্টিক ডিসকয়ডাল (Meroblastic Discoidal) ধরনের। এই ধরনের ক্লিভেজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো:

মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজের কারণ

রুই মাছের ডিমে প্রচুর পরিমাণে কুসুম (Yolk) থাকে। এই কুসুমের কারণে সম্পূর্ণ ডিম্বাণু বিভক্ত হতে পারে না। শুধুমাত্র ডিমের উপরিভাগের একটি ছোট অংশ, যাকে ব্লাস্টোডিস্ক (Blastodisc) বলা হয়, সেখানেই বিভাজন ঘটে।

ক্লিভেজ প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ

প্রথম ক্লিভেজ (২-কোষ পর্যায়)

  • নিষেকের ১-২ ঘন্টা পর শুরু হয়
  • ব্লাস্টোডিস্ক উল্লম্বভাবে বিভক্ত হয়
  • দুটি সমান ব্লাস্টোমিয়ার গঠিত হয়

দ্বিতীয় ক্লিভেজ (৪-কোষ পর্যায়)

  • প্রথম বিভাজনের ৩০-৪৫ মিনিট পর
  • প্রথম বিভাজনের সাথে সমকোণে ঘটে
  • চারটি সমান কোষ গঠিত হয়

তৃতীয় ক্লিভেজ (৮-কোষ পর্যায়)

  • আবার উল্লম্বভাবে ঘটে
  • আটটি কোষ গঠিত হয়

চতুর্থ ক্লিভেজ (১৬-কোষ পর্যায়)

  • এই পর্যায়ে অনুভূমিক বিভাজন শুরু হয়
  • কোষগুলো দুই স্তরে বিভক্ত হয়

সময়ের সাথে ক্লিভেজের হার

ক্লিভেজ পর্যায় কোষ সংখ্যা সময় (নিষেকের পর) তাপমাত্রা
প্রথম ১-২ ঘন্টা ২৬-২৮°C
দ্বিতীয় ২-৩ ঘন্টা ২৬-২৮°C
তৃতীয় ৩-৪ ঘন্টা ২৬-২৮°C
চতুর্থ ১৬ ৪-৫ ঘন্টা ২৬-২৮°C
পঞ্চম ৩২ ৫-৬ ঘন্টা ২৬-২৮°C
ষষ্ঠ ৬৪ ৬-৭ ঘন্টা ২৬-২৮°C

মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজের বৈশিষ্ট্য

শারীরিক বৈশিষ্ট্য

১. আংশিক বিভাজন

  • সম্পূর্ণ ডিম বিভক্ত হয় না
  • শুধুমাত্র ব্লাস্টোডিস্ক অংশে বিভাজন
  • কুসুম অংশ অবিভক্ত থাকে

২. ডিসকয়ডাল প্যাটার্ন

  • বিভাজন একটি চাকতির (disc) মতো আকারে ঘটে
  • প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত প্যাটার্ন
  • পরবর্তীতে অনিয়মিত হয়ে ওঠে

৩. কোষের আকার পরিবর্তন

  • প্রাথমিকভাবে কোষগুলো বড় থাকে
  • ক্রমান্বয়ে ছোট হতে থাকে
  • কিন্তু মোট ভলিউম একই থাকে

রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য

১. জিন প্রকাশণা

  • প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃজিন সক্রিয় থাকে
  • ধীরে ধীরে ভ্রূণীয় জিন সক্রিয় হয়
  • MBT (Mid-Blastula Transition) নামক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়

২. প্রোটিন সংশ্লেষণ

  • প্রাথমিকভাবে কম প্রোটিন সংশ্লেষণ
  • ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়
  • নতুন এনজাইম ও প্রোটিন তৈরি হয়

রুই মাছের ভ্রূণ বিকাশ

ব্লাস্টুলা পর্যায়

ক্লিভেজের পর ব্লাস্টুলা পর্যায় শুরু হয়। এই পর্যায়ে:

  • কোষগুলো একটি ফাঁপা গোলক গঠন করে
  • ব্লাস্টোসিল নামক গহ্বর তৈরি হয়
  • কোষ বিভাজনের হার কমে যায়
  • নিষেকের ৮-১০ ঘন্টা পর এই পর্যায় শুরু

গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়

ব্লাস্টুলার পর গ্যাস্ট্রুলেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়:

  • কোষগুলো ভিতরের দিকে ভাঁজ হতে শুরু করে
  • তিনটি জার্ম লেয়ার গঠিত হয়:
    • একটোডার্ম: ত্বক ও স্নায়ুতন্ত্র
    • মেসোডার্ম: পেশী ও কঙ্কাল
    • এন্ডোডার্ম: পরিপাকতন্ত্র
  • নিষেকের ১২-১৬ ঘন্টা পর

নিউরুলা পর্যায়

গ্যাস্ট্রুলার পর নিউরুলেশন শুরু হয়:

  • স্নায়ুতন্ত্রের প্রাথমিক গঠন
  • নিউরাল টিউব তৈরি
  • মেরুদণ্ডের প্রাথমিক রূপ
  • নিষেকের ১৮-২৪ ঘন্টা পর

অন্যান্য মাছের সাথে তুলনা

কার্প পরিবারের মাছ

রুই মাছের মতোই অন্যান্য কার্প পরিবারের মাছেও মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ দেখা যায়:

কাতলা মাছ (Catla catla)

  • ক্লিভেজ প্যাটার্ন রুই মাছের অনুরূপ
  • তাপমাত্রা সংবেদনশীলতা একই রকম
  • ভ্রূণ বিকাশের সময়কাল প্রায় সমান

মৃগেল মাছ (Cirrhinus mrigala)

  • সামান্য দ্রুততর ক্লিভেজ
  • ডিমের আকার তুলনামূলক ছোট
  • কুসুমের পরিমাণ কম

অন্যান্য মাছের গ্রুপ

স্যালমন পরিবার

  • মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ কিন্তু ভিন্ন প্যাটার্ন
  • ঠাণ্ডা পানির মাছ হওয়ায় ধীরগতির বিকাশ
  • ক্লিভেজ সম্পূর্ণ হতে ৪৮-৭২ ঘন্টা

টুনা ও ম্যাকারেল

  • অত্যন্ত দ্রুত ক্লিভেজ
  • উচ্চ তাপমাত্রায় দ্রুত বিকাশ
  • পেলাজিক ডিম হওয়ায় বিশেষ অভিযোজন

পরিবেশগত প্রভাব

তাপমাত্রার প্রভাব

রুই মাছের ক্লিভেজ তাপমাত্রার উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল:

আদর্শ তাপমাত্রা (২৬-২৮°C)

  • স্বাভাবিক ক্লিভেজ হার
  • ৯৫-৯৮% সফল হ্যাচিং
  • সুস্থ পোনা উৎপাদন

কম তাপমাত্রা (২২°C-এর নিচে)

  • ধীর ক্লিভেজ
  • বিকলাঙ্গতার ঝুঁকি বৃদ্ধি
  • হ্যাচিং হার কমে যায়

বেশি তাপমাত্রা (৩২°C-এর উপরে)

  • অনিয়মিত ক্লিভেজ
  • ভ্রূণ মৃত্যুর হার বৃদ্ধি
  • জিনগত ত্রুটির সম্ভাবনা

অক্সিজেনের প্রভাব

পর্যাপ্ত অক্সিজেন (৫-৭ ppm)

  • স্বাভাবিক বিপাকীয় প্রক্রিয়া
  • সুষ্ঠু কোষ বিভাজন
  • স্বাস্থ্যকর ভ্রূণ বিকাশ

অক্সিজেনের অভাব (৩ ppm-এর নিচে)

  • ক্লিভেজ প্রক্রিয়া ব্যাহত
  • ভ্রূণ মৃত্যু
  • বিকলাঙ্গতার ঝুঁকি

pH এর প্রভাব

আদর্শ pH ৭.০-৮.৫ এর মধ্যে রাখা প্রয়োজন। এর বাইরে গেলে ক্লিভেজ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

মৎস্যচাষে গুরুত্ব

কৃত্রিম প্রজনন

রুই মাছের ক্লিভেজ বোঝা কৃত্রিম প্রজননে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা

  • সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
  • উপযুক্ত পানির গুণমান
  • নিয়মিত পর্যবেক্ষণ

উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি

  • ক্লিভেজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সফলতার হার বৃদ্ধি
  • অস্বাভাবিক ভ্রূণ চিহ্নিতকরণ
  • গুণগত পোনা উৎপাদন

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান

  • বাংলাদেশে রুই মাছের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৫ লক্ষ টন
  • রপ্তানি আয় বৃদ্ধি
  • কর্মসংস্থান সৃষ্টি

খাদ্য নিরাপত্তা

  • প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস
  • পুষ্টিকর ও সাশ্রয়ী
  • গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয়ের উৎস

গবেষণার সাম্প্রতিক অগ্রগতি

জিনগত গবেষণা

জিনোম সিকোয়েন্সিং

  • রুই মাছের সম্পূর্ণ জিনোম ম্যাপিং
  • ক্লিভেজ নিয়ন্ত্রণকারী জিন চিহ্নিতকরণ
  • বংশগত বৈশিষ্ট্য উন্নয়ন

জিন এডিটিং

  • CRISPR-Cas9 প্রযুক্তি ব্যবহার
  • রোগ প্রতিরোধী জাত উন্নয়ন
  • দ্রুত বৃদ্ধিশীল জাত তৈরি

জৈবপ্রযুক্তি

ক্রায়োপ্রিজারভেশন

  • স্পার্ম ও ডিম সংরক্ষণ
  • জিনগত বৈচিত্র্য রক্ষা
  • সারা বছর প্রজনন সম্ভাবনা

হরমোন থেরাপি

  • প্রজনন হরমোন ব্যবহার
  • প্রাকৃতিক প্রজনন উদ্দীপনা
  • ডিম ও শুক্রাণুর গুণমান বৃদ্ধি

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

তাপমাত্রা বৃদ্ধি

  • ক্লিভেজ প্যাটার্নে পরিবর্তন
  • অভিযোজন কৌশল প্রয়োজন
  • নতুন হ্যাচারি প্রযুক্তি

পানির গুণমান পরিবর্তন

  • pH ও অক্সিজেনের মাত্রা পরিবর্তন
  • নতুন ব্যবস্থাপনা কৌশল
  • পরিবেশ বান্ধব চাষ পদ্ধতি

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

  • ক্লিভেজ পর্যবেক্ষণে AI ব্যবহার
  • স্বয়ংক্রিয় হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা
  • রোগ নির্ণয়ে সহায়তা

আইওটি প্রযুক্তি

  • রিয়েল-টাইম মনিটরিং
  • দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ
  • ডেটা বিশ্লেষণ

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী (FAQ)

১. রুই মাছের ক্লিভেজ কেন মেরোব্লাস্টিক ধরনের?

রুই মাছের ডিমে প্রচুর পরিমাণে কুসুম (yolk) থাকে। এই অধিক কুসুমের কারণে সম্পূর্ণ ডিম্বাণু বিভক্ত হতে পারে না। শুধুমাত্র ডিমের উপরিভাগের কুসুমমুক্ত অংশ (ব্লাস্টোডিস্ক) বিভক্ত হয়, যার ফলে মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ হয়।

২. রুই মাছের ক্লিভেজ কত সময় লাগে?

স্বাভাবিক তাপমাত্রায় (২৬-২৮°C) রুই মাছের প্রথম ক্লিভেজ নিষেকের ১-২ ঘন্টা পর শুরু হয় এবং সম্পূর্ণ ক্লিভেজ প্রক্রিয়া প্রায় ১২-১৬ ঘন্টা সময় নেয়।

৩. তাপমাত্রা কেন রুই মাছের ক্লিভেজে এত গুরুত্বপূর্ণ?

তাপমাত্রা ক্লিভেজের গতি ও সফলতা নির্ধারণ করে। আদর্শ তাপমাত্রা (২৬-২৮°C) এ এনজাইমগুলো সর্বোচ্চ কার্যকর থাকে। এর কম বা বেশি তাপমাত্রায় ক্লিভেজ ব্যাহত হয় এবং ভ্রূণ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

৪. রুই মাছের ক্লিভেজ কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়?

হ্যাচারিতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে ক্লিভেজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। ডিমের উপরিভাগে কোষ বিভাজনের ধাপগুলো দেখা যায়। আধুনিক হ্যাচারিতে ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপ ও ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়।

৫. ক্লিভেজে সমস্যা হলে কী করণীয়?

ক্লিভেজে অনিয়মিতা দেখা দিলে প্রথমে পানির গুণমান (তাপমাত্রা, pH, অক্সিজেন) পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে তাপমাত্রা সমন্বয় করতে হবে এবং অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজের সুবিধা কী?

মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজের মাধ্যমে ভ্রূণ প্রাথমিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি কুসুম থেকে পায়। এতে বাইরে থেকে খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন হয় না এবং ভ্রূণ সুরক্ষিত থাকে।

৭. কৃত্রিম প্রজননে ক্লিভেজ জ্ঞান কেন প্রয়োজন?

ক্লিভেজ বোঝার মাধ্যমে হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা যায়, সফলতার হার বৃদ্ধি পায় এবং গুণগত পোনা উৎপাদন করা যায়। এছাড়া সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে সহায়ক।

৮. রুই মাছের ক্লিভেজ কি সারা বছর একই রকম?

না, প্রাকৃতিক পরিবেশে মৌসুমি পরিবর্তনের সাথে ক্লিভেজের হার পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে দ্রুত এবং শীতকালে ধীর হয়। তবে নিয়ন্ত্রিত হ্যাচারিতে সারা বছর স্থিতিশীল রাখা যায়।

উপসংহার

রুই মাছের মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ একটি জটিল কিন্তু অত্যাশ্চর্য জৈবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি ছোট্ট নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ মাছের জন্ম হয়। কুসুমযুক্ত ডিমের বিশেষত্বের কারণে এই ক্লিভেজ আংশিক এবং ডিসকয়ডাল প্যাটার্নে ঘটে।

আমাদের দেশের মৎস্যচাষ ও মৎস্য উৎপাদনে রুই মাছের অবদান অপরিসীম। এই মাছের ক্লিভেজ প্রক্রিয়া বোঝা কৃত্রিম প্রজনন, হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা এবং গুণগত পোনা উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাপমাত্রা, অক্সিজেন, pH এর মতো পরিবেশগত ফ্যাক্টরগুলো এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

ভবিষ্যতে জিনগত গবেষণা, জৈবপ্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের মাধ্যমে রুই মাছের ক্লিভেজ প্রক্রিয়া আরও ভালোভাবে বোঝা এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এতে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রুই মাছের ক্লিভেজ সম্পর্কিত জ্ঞান আমাদের টেকসই মৎস্যচাষ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করতে পারব।

About the author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest Posts

  • বড় মাছ ধরা : বাংলাদেশের নদী-নালায় বৃহৎ মাছ শিকারের সম্পূর্ণ গাইড

    বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল আর সমুদ্রে বড় মাছ ধরা একটি ঐতিহ্যবাহী পেশা এবং শিল্প। হাজার বছরের অভিজ্ঞতায় গড়ে ওঠা এই কৌশল আজও লাখো মানুষের জীবিকার উৎস। বড় মাছ ধরা শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, এটি একটি শিল্প, একটি বিজ্ঞান এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এক অনন্য সংলাপ। আমাদের দেশের জেলেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বড় মাছ ধরার বিভিন্ন…

    Read more

  • মাছ চাষে করণীয় : বাংলাদেশে সফল মৎস্য চাষের সম্পূর্ণ গাইড

    বাংলাদেশে মাছ চাষ শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্যবাহী পেশা নয়, বরং এটি আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। মাছ চাষে করণীয় বিষয়গুলো সঠিকভাবে জানা এবং প্রয়োগ করা প্রতিটি মৎস্যচাষীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশে প্রায় ১২ লাখ হেক্টর এলাকায় মাছ চাষ হয়, যা থেকে বার্ষিক ৪৫ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। আধুনিক যুগে মাছ চাষে করণীয় কাজগুলো আরও…

    Read more

  • মাছ চাষের গুরুত্ব সমস্যা ও সম্ভাবনা

    বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মৎস্য উৎপাদনে অগ্রগামী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাছ চাষের গুরুত্ব সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়টি আমাদের জাতীয় অর্থনীতি, পুষ্টি নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে, যা চীন ও ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বার্ষিক ৪.৮ মিলিয়ন টন মাছ উৎপাদিত হয়, যার…

    Read more