বাংলাদেশের মৎস্য খাতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং দেশ বর্তমানে মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এই অগ্রগতির পেছনে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ঋণ সুবিধা যা মৎস্যকৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। মাত্র ৪% সুদের হারে কৃষকরা মাছ চাষের জন্য ঋণ নিতে পারেন সরকারি রিফাইন্যান্স স্কিমের আওতায়।
ভূমিকা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান অপরিসীম। এই খাত জিডিপিতে ২.৪৩%, কৃষি জিডিপিতে ২২.১৪% এবং মোট জাতীয় রপ্তানিতে ১.০৫% অবদান রাখে। দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ মাছ চাষ ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সাথে জড়িত। তবে এই সম্ভাবনাময় খাতের পূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা।
বাংলাদেশে মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু অনেক উদ্যোক্তা প্রাথমিক পুঁজির অভাবে এই খাতে প্রবেশ করতে পারেন না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের ঋণ সুবিধা চালু করেছে।
বাংলাদেশে মৎস্য খাতের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে মৎস্য খাত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে দেশে মোট ৪৮ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে, যার মধ্যে ৩২ লাখ টন এসেছে মাছ চাষ থেকে এবং ১৩ লাখ টন এসেছে উন্মুক্ত জলাশয় থেকে। এই উৎপাদনের অর্ধেক ছিল ইলিশ মাছ, যার পরিমাণ ছিল ৬.৫ লাখ টন।
বাংলাদেশ অ্যাকুয়াকালচার বাজার ২০২৪ সালে ২.৮ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে এবং ২০২৫-২০৩৩ সালের মধ্যে ৩.৭% হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩৩ সালে ৪.০ মিলিয়ন টনে পৌঁছানোর প্রত্যাশা রয়েছে।
মৎস্য খাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
- জিডিপি অবদান: ২.৪৩%
- কৃষি জিডিপি অবদান: ২২.১৪%
- রপ্তানি আয়: ৪৭১ মিলিয়ন ডলার (২০২২-২৩ অর্থবছর)
- কর্মসংস্থান: ২ কোটি মানুষ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে যুক্ত
সরকারি ঋণ সুবিধাসমূহ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিফাইন্যান্স স্কিম
বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষকদের জন্য ৫,০০০ কোটি টাকার রিফাইন্যান্স স্কিম চালু করেছে যেখানে মাছ চাষের জন্য মাত্র ৪% সুদের হারে ঋণ পাওয়া যায়। এই ঋণ ১৮ মাসে (৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ) পরিশোধ করতে হয়।
এই স্কিমের বিশেষত্ব:
- সুদের হার: মাত্র ৪%
- পরিশোধের মেয়াদ: ১৮ মাস (৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ)
- ব্যাংকের জন্য সুদ: ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মাত্র ০.৫% সুদে অর্থ নিতে পারে
- সময়সীমা: ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত (প্রয়োজনে বাড়ানো যেতে পারে)
কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতি ২০২৩-২৪
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো কৃষকদের জন্য ৩৫,০০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৩.৬০% বেশি।
বিতরণের লক্ষ্য:
- সরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংক: ১২,০৩০ কোটি টাকা
- বেসরকারি ব্যাংক: ২১,৯২৩ কোটি টাকা
- বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক: ১,০৪১ কোটি টাকা
মৎস্য খাতে কমপক্ষে ১৩% এবং পশুসম্পদ খাতে কমপক্ষে ১৫% ঋণ বিতরণ করতে হবে।
বিনা জামানত ঋণ
ছোট, প্রান্তিক ও ভাগচাষিরা বিনা জামানতে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন। সর্বোচ্চ ৫ একর জমিতে ধান সহ বিভিন্ন ফসল ও শাকসবজি চাষের জন্য বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া হয়।
বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ সুবিধা
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড কৃষি ও পল্লী ঋণ প্রদান করে থাকে। এই ব্যাংকের কৃষি ঋণের জন্য নিম্নলিখিত শর্তাবলী রয়েছে:
যোগ্যতার শর্ত:
- বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে
- বয়স ২১-৬০ বছরের মধ্যে
- সংশ্লিষ্ট কৃষিকাজে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
- প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ হতে হবে
- জমির মালিকানা বা ব্যবহারের বৈধ অধিকার থাকতে হবে
- অন্য কোনো ব্যাংক/এনবিএফআই/এমএফআইতে খেলাপি হওয়া যাবে না
সোনালী ব্যাংক
সোনালী ব্যাংক, দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক, একটি বিশেষ পল্লী বিনিয়োগ কর্মসূচি চালু করেছে যার আওতায় মাছ চাষের জন্য বিনা জামানতে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়।
এক্সিম ব্যাংক
এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড কৃষিকাজে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করে থাকে। তাদের কৃষি ব্যাংকিং বিভাগে ফসল, মৎস্য ও পশুসম্পদের জন্য ৬০:১০:১০ অনুপাতে ঋণ বিতরণ করা হয়।
মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের ঋণ সুবিধা
গ্রামীণ ব্যাংক
গ্রামীণ ব্যাংক মৎস্য খাতে ঋণ প্রদানকারী এনজিওগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাংক সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে, বিনা জামানতে, গ্রামীণ নিস্বল্প মানুষদের মাছ চাষ, মাছ ব্যবসা এবং জাল তৈরির মতো কাজের জন্য কার্যকরী পুঁজি হিসেবে।
অন্যান্য এনজিও
বিভিন্ন এনজিও গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মৎস্য চাষের উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করে থাকে।
ঋণের ধরন ও শর্তাবলী
ঋণের প্রকারভেদ
১. স্বল্পমেয়াদি ঋণ (১ বছর পর্যন্ত)
- মাছের পোনা কেনা
- মাছের খাবার ক্রয়
- পুকুর প্রস্তুতি
- দৈনন্দিন খরচ
২. মেয়াদি ঋণ (১-৫ বছর)
- পুকুর খনন ও সংস্কার
- হ্যাচারি স্থাপন
- যন্ত্রপাতি ক্রয়
- পরিবহন ব্যবস্থা
৩. দীর্ঘমেয়াদি ঋণ (৫ বছরের বেশি)
- বৃহৎ মাছ চাষ প্রকল্প
- প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন
- কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ
ঋণের শর্তাবলী
ঋণের ধরন | সুদের হার | সর্বোচ্চ পরিমাণ | পরিশোধের মেয়াদ | জামানত |
---|---|---|---|---|
সরকারি রিফাইন্যান্স | ৪% | ২ লাখ টাকা | ১৮ মাস | বিনা জামানত |
কৃষি ব্যাংকের ঋণ | ৮-১০% | ৫ লাখ টাকা | ১-৩ বছর | জমির দলিল |
বাণিজ্যিক ব্যাংক | ১০-১৩% | ১০ লাখ টাকা | ১-৫ বছর | সম্পত্তির দলিল |
মাইক্রোফাইন্যান্স | ১২-১৮% | ৫০ হাজার টাকা | ৬-১২ মাস | গ্রুপ গ্যারান্টি |
ঋণ আবেদনের প্রক্রিয়া
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যক্তিগত তথ্য:
- জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট
- ভোটার আইডি কার্ড
- ছবি (পাসপোর্ট সাইজ)
- ব্যাংক হিসাব
সম্পত্তি সংক্রান্ত:
- জমির দলিল/খতিয়ান
- মালিকানার প্রমাণপত্র
- ভূমি ব্যবহারের অনুমতিপত্র
প্রকল্প সংক্রান্ত:
- প্রকল্প প্রস্তাব
- খরচের হিসাব
- আয়ের প্রক্ষেপণ
- কারিগরি পরিকল্পনা
আবেদন প্রক্রিয়া
ধাপ ১: প্রাথমিক যোগাযোগ
- নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ
- ঋণ কর্মকর্তার সাথে আলোচনা
- প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ
ধাপ ২: আবেদন জমা
- যথাযথ ফর্ম পূরণ
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা
- প্রকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন
ধাপ ৩: যাচাই-বাছাই
- ব্যাংকের মূল্যায়ন
- জমিন ও প্রকল্প পরিদর্শন
- আর্থিক সক্ষমতা যাচাই
ধাপ ৪: অনুমোদন
- ঋণ কমিটির সিদ্ধান্ত
- চুক্তি সম্পাদন
- অর্থ বিতরণ
মাছ চাষে বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ
ঐতিহ্যগত মাছ চাষ
পুকুরে মাছ চাষ:
- কার্প জাতীয় মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল)
- শিং, মাগুর, কৈ মাছ
- তেলাপিয়া, পাংগাস
প্রাথমিক বিনিয়োগ: ৫০,০০০ – ২,০০,০০০ টাকা লাভের হার: ৩০-৫০%
আধুনিক চাষ পদ্ধতি
বায়োফ্লক পদ্ধতি:
- কম জায়গায় বেশি উৎপাদন
- পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ
- খাবারের সাশ্রয়ী ব্যবহার
প্রাথমিক বিনিয়োগ: ২,০০,০০০ – ৫,০০,০০০ টাকা লাভের হার: ৫০-৮০%
প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন
মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ:
- শুঁটকি মাছ উৎপাদন
- ফ্রোজেন ফিশ
- ফিশ ফিড তৈরি
বাংলাদেশে ১২৫টির বেশি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা রয়েছে, যেগুলো প্রধানত খুলনা ও চট্টগ্রামের মতো বন্দর শহরে অবস্থিত।
সাফল্যের গল্প ও কেস স্টাডি
উত্তরাঞ্চলের সফল মৎস্যকৃষক
মো. আব্দুল করিম (ময়মনসিংহ)
- প্রাথমিক বিনিয়োগ: ১,৫০,০০০ টাকা
- ঋণ গ্রহণ: কৃষি ব্যাংক থেকে ১,০০,০০০ টাকা
- বার্ষিক আয়: ৪,০০,০০০ টাকা
- বিনিয়োগের ২ বছরে মূলধন ফেরত
দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি চাষি
রাশেদা বেগম (বাগেরহাট)
- প্রাথমিক বিনিয়োগ: ৩,০০,০০০ টাকা
- মাইক্রোফাইন্যান্স ঋণ: ১,৫০,০০০ টাকা
- চিংড়ি ও মাছের মিশ্র চাষ
- বার্ষিক আয়: ৫,৫০,০০০ টাকা
পাহাড়ি এলাকার মাছ চাষি
সুমন চাকমা (রাঙামাটি)
- পাহাড়ি ঝর্ণায় পাংগাস চাষ
- প্রাথমিক বিনিয়োগ: ৮০,০০০ টাকা
- সমবায় ভিত্তিক ঋণ: ৫০,০০০ টাকা
- বার্ষিক আয়: ২,২০,০০০ টাকা
ঋণ গ্রহণের সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধাসমূহ
আর্থিক সুবিধা:
- কম সুদে পুঁজি সংস্থান
- দীর্ঘমেয়াদি পরিশোধের সুবিধা
- গ্রেস পিরিয়ডের সুবিধা
- বিনা জামানত ঋণের সুবিধা
কারিগরি সহায়তা:
- বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ
- কারিগরি পরামর্শ
- বাজারজাতকরণে সহায়তা
- নেটওয়ার্কিং সুবিধা
চ্যালেঞ্জসমূহ
আর্থিক ঝুঁকি:
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি
- বাজার দরের ওঠানামা
- রোগবালাইয়ের ক্ষতি
- পরিশোধে অক্ষমতার ভয়
প্রশাসনিক জটিলতা:
- দীর্ঘ আবেদন প্রক্রিয়া
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জটিলতা
- ব্যাংক কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা
- ২৫% কৃষকই কৃষি ও পল্লী ঋণ গ্রহণ করেন এবং বাকি ৭৫% কৃষক ঋণ আবেদনের পদ্ধতি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের অসহযোগী মনোভাবের কারণে ঋণের জন্য আবেদন করেন না
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও বীমা
মৎস্য বীমা
সরকারি বীমা স্কিম:
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির জন্য
- রোগবালাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ
- প্রিমিয়াম: প্রকল্প খরচের ২-৩%
বেসরকারি বীমা:
- পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা
- দ্রুত ক্ষতিপূরণ
- প্রিমিয়াম: প্রকল্প খরচের ৩-৫%
ঝুঁকি কমানোর উপায়
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন:
- উন্নত জাতের মাছ নির্বাচন
- নিয়মিত পানির গুণগত মান পরীক্ষা
- সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা
- রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
বাজার গবেষণা:
- চাহিদা ও যোগান বিশ্লেষণ
- দাম পর্যবেক্ষণ
- বিকল্প বাজার অন্বেষণ
- প্রক্রিয়াজাতকরণের সুবিধা
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও উন্নয়ন
রপ্তানি সম্ভাবনা
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ জলজ পণ্য রপ্তানি করে ৪৭১ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১২ মিলিয়ন ডলার কম।
রপ্তানির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র:
- ফ্রোজেন মাছ ও চিংড়ি
- শুঁটকি মাছ
- ফিশ অয়েল ও ফিশ মিল
- অলংকারিক মাছ
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
আধুনিক চাষ পদ্ধতি:
- রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম (RAS)
- বায়োফ্লক প্রযুক্তি
- অটোমেটেড ফিডিং সিস্টেম
- আইওটি ভিত্তিক মনিটরিং
গবেষণা ও উন্নয়ন: বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (BFRI) বিজ্ঞানীরা দেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে পাওয়া ২৬১ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৪০টি প্রজাতির কৃত্রিম প্রজনন ও উন্নত চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন
সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মৎস্য অধিদপ্তরের রাজস্ব খাতের আওতায় মোট ৫১,৪৬০ জন সুবিধাভোগী এবং ৩,৯০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
প্রশিক্ষণের বিষয়সমূহ:
- বৈজ্ঞানিক মাছ চাষ পদ্ধতি
- হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা
- রোগবালাই দমন
- বাজারজাতকরণ কৌশল
বেসরকারি প্রশিক্ষণ
এনজিও প্রশিক্ষণ:
- হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ
- সমবায় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ
- উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে:
- ফিশারিজ বিভাগের ডিপ্লোমা কোর্স
- স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি
- গবেষণা কার্যক্রম
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১. মাছ চাষের জন্য কত টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়?
বিনা জামানতে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকরা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। জামানত দিয়ে আরো বেশি পরিমাণ ঋণ পাওয়া সম্ভব, যা ব্যাংক ভেদে ৫-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
২. সরকারি রিফাইন্যান্স স্কিমে সুদের হার কত?
বর্তমানে সরকারি রিফাইন্যান্স স্কিমে মাছ চাষের জন্য মাত্র ৪% হারে সুদ নিয়ে ঋণ পাওয়া যায়। এটি ১৮ মাসে (৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ) পরিশোধ করতে হয়।
৩. মাছ চাষের ঋণের জন্য কী কী কাগজপত্র লাগে?
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে: জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির দলিল/খতিয়ান, ছবি, ব্যাংক হিসাব, প্রকল্প প্রস্তাব, এবং মালিকানার প্রমাণপত্র।
৪. কোন ব্যাংকগুলো মাছ চাষের জন্য ঋণ দেয়?
সরকারি ব্যাংক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী), কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো (ব্যাংক এশিয়া, এক্সিম ব্যাংক সহ অন্যান্য) মাছ চাষের জন্য ঋণ প্রদান করে।
৫. মাছ চাষে বিনিয়োগের ন্যূনতম পরিমাণ কত?
ছোট পরিসরে মাছ চাষ শুরু করতে ন্যূনতম ৫০,০০০-১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের জন্য ২-৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে।
৬. ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কী হবে?
ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক জামানতি সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ আদায় করতে পারে। এছাড়া ঋণগ্রহীতা ভবিষ্যতে অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে সমস্যা হতে পারে।
৭. মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা আছে কি?
হ্যাঁ, মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। যোগ্যতার শর্ত পূরণ করলে এবং প্রকল্প কারিগরিভাবে সম্ভাব্য ও আর্থিকভাবে লাভজনক হলে মহিলা ঋণগ্রহীতারা অগ্রাধিকার পাবেন।
৮. প্রশিক্ষণ ছাড়াই কি মাছ চাষের ঋণ পাওয়া যায়?
বেশিরভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কৃষিকাজে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ চায়। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান ঋণের সাথে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে থাকে।
৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হলে কী করণীয়?
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও মৎস্য অধিদপ্তরে অবহিত করতে হবে। সরকার প্রায়ই এ ধরনের ক্ষেত্রে ঋণ মওকুফ বা পুনর্বিন্যাসের ব্যবস্থা করে থাকে।
১০. মাছ চাষের বীমা করা যায় কি?
হ্যাঁ, কৃষি বীমা কোম্পানি ও বিভিন্ন বেসরকারি বীমা কোম্পানির মাধ্যমে মাছ চাষের বীমা করা যায়। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
উপসংহার
বাংলাদেশে মৎস্য খাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে এবং সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ঋণ সুবিধা চালু করা হয়েছে যা মৎস্যকৃষকদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক। কম সুদে ঋণ, প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে এই খাত আরো সমৃদ্ধ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।
মাছ চাষের ঋণ সুবিধা কেবল ব্যক্তিগত আর্থিক উন্নতিই নিশ্চিত করে না, বরং জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশ যখন মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, তখন এই খাতের আরো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে পারে।
ভবিষ্যতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি, এবং আরো সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের মৎস্য খাত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। মৎস্যকৃষকদের জন্য এখনই সময় এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হওয়ার এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার।