Others

গুইসাপ খাওয়া হারাম না হালাল

খাদ্যাভ্যাস মানব সভ্যতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মে খাবারের বিষয়ে নানা ধরনের নিয়ম-কানুন রয়েছে। ইসলাম ধর্মে হালাল এবং হারাম খাবারের একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোর বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয় হল গুইসাপ খাওয়া। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্যে গুইসাপ খাওয়া নিয়ে ভিন্ন মতামত রয়েছে।

এই নিবন্ধে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করব গুইসাপ খাওয়া ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে হালাল নাকি হারাম, এর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি, বিভিন্ন ইসলামী স্কলারদের মতামত, এবং বিভিন্ন মাজহাবের দৃষ্টিকোণ। এছাড়া গুইসাপের পুষ্টিমান ও স্বাস্থ্যগত দিকগুলোও আলোচনা করা হবে।

ইসলামে খাদ্য সম্পর্কিত মৌলিক নীতিমালা

ইসলামে খাদ্য সম্পর্কিত কিছু মৌলিক নীতিমালা রয়েছে যা পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এই নীতিমালাগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো আমাদের গুইসাপ খাওয়া হালাল নাকি হারাম তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।

কোরআনে হালাল খাবার সম্পর্কে নির্দেশনা

কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে হালাল খাবার সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সূরা আল-বাকারা (২:১৭৩) এ আল্লাহ তাআলা বলেন:

“তিনি তোমাদের জন্য কেবল মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে তা হারাম করেছেন।”

সূরা আল-মায়িদা (৫:৪) এ আল্লাহ তাআলা বলেন:

“তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তাদের জন্য কী হালাল করা হয়েছে? বলো: ‘তোমাদের জন্য সব ভালো জিনিস হালাল করা হয়েছে।'”

হাদিসে হালাল ও হারাম খাবার

নবী মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিসে হালাল ও হারাম খাবার সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যায়। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিসে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সা.) বলেছেন:

“যা আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে হালাল করেছেন, তা হালাল; এবং যা তিনি হারাম করেছেন, তা হারাম; আর যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন, তা মাফ করা হয়েছে।”

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, যেসব খাবারের বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা নেই, সেগুলো মূলত হালাল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

গুইসাপ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের বক্তব্য

কোরআনে সরাসরি গুইসাপ খাওয়া নিষিদ্ধ বা অনুমোদিত হওয়ার বিষয়ে কোন স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে হাদিসে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায় যা গুইসাপ সম্পর্কিত।

গুইসাপ সম্পর্কিত হাদিস

সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সা.)-কে গুইসাপ খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:

“আমি এটি খাই না এবং এটি হারামও বলি না।”

এই হাদিসটি দেখায় যে, নবী (সা.) গুইসাপ খাওয়াকে স্পষ্টভাবে হারাম বলেননি, তবে তিনি নিজে এটি খেতেন না।

আরেকটি হাদিসে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি নবী (সা.)-এর সাথে একবার মায়মুনা (রা.)-এর বাড়ি গিয়েছিলেন, যেখানে ভুনা গুইসাপ পরিবেশন করা হয়েছিল। নবী (সা.) তার হাত গুটিয়ে নিলেন। খালিদ (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, গুইসাপ কি হারাম?” তিনি বললেন, “না, তবে এটি আমার জনগোষ্ঠীর অঞ্চলে পাওয়া যায় না, তাই আমি এতে অভ্যস্ত নই।” খালিদ (রা.) বলেন, “আমি এটি খেয়েছি এবং নবী (সা.) আমাকে দেখছিলেন কিন্তু নিষেধ করেননি।”

এই হাদিসগুলি দেখায় যে গুইসাপ খাওয়া স্পষ্টভাবে হারাম নয়, বরং এটি একটি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হতে পারে।

বিভিন্ন ইসলামী মাজহাবের মতামত

ইসলামের চারটি প্রধান সুন্নি মাজহাব (হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি) এবং শিয়া মাজহাবে গুইসাপ খাওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।

হানাফি মাজহাব

হানাফি মাজহাবের মতে, গুইসাপ খাওয়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়) কিন্তু হারাম নয়। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) মনে করতেন যে, যেসব প্রাণী কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে সমাজে প্রচলিত ধারণা ও রীতি অনুসরণ করা উচিত। যেহেতু অধিকাংশ আরব সমাজে গুইসাপ খাওয়া ঘৃণার বিষয় ছিল, তাই তা মাকরুহ বলে গণ্য করা হয়েছে।

মালিকি মাজহাব

মালিকি মাজহাবের অনুসারীরা মনে করেন যে গুইসাপ খাওয়া হালাল। ইমাম মালিক (রহ.) এর মতে, সাহারা মরুভূমির আরবরা গুইসাপ খেত এবং নবী (সা.) তাদের নিষেধ করেননি। তাছাড়া হাদিসে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) গুইসাপ খেয়েছিলেন এবং নবী (সা.) তাকে বাধা দেননি।

শাফেয়ি মাজহাব

শাফেয়ি মাজহাবের মতে, গুইসাপ খাওয়া হালাল। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) হাদিসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, যেহেতু নবী (সা.) গুইসাপকে স্পষ্টভাবে হারাম বলেননি, তাই এটি হালাল।

হাম্বলি মাজহাব

হাম্বলি মাজহাবের অনুসারীরাও গুইসাপ খাওয়াকে হালাল মনে করেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর মতে, যেহেতু প্রমাণিত হাদিসে নবী (সা.) গুইসাপকে হারাম বলেননি, তাই এটি হালাল।

শিয়া মাজহাব

শিয়া মাজহাবে গুইসাপ খাওয়া হারাম বলে গণ্য করা হয়। তাদের মতে, যেসব প্রাণীর রক্ত প্রবাহিত হয় এবং যা সাধারণত ঘৃণার বিষয়, সেগুলো খাওয়া উচিত নয়।

গুইসাপ খাওয়া হালাল হওয়ার পক্ষে যুক্তি

গুইসাপ খাওয়া হালাল হওয়ার পক্ষে কিছু যুক্তি রয়েছে:

  1. কোরআনে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই: কোরআনে গুইসাপ খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ার কোন স্পষ্ট আয়াত নেই।
  2. হাদিসে অনুমতি: উপরে উল্লিখিত হাদিসে দেখা যায় যে, নবী (সা.) গুইসাপ খাওয়াকে স্পষ্টভাবে হারাম বলেননি এবং খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-কে গুইসাপ খেতে বাধা দেননি।
  3. মাজহাবের সমর্থন: তিনটি প্রধান সুন্নি মাজহাব (মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি) গুইসাপ খাওয়াকে হালাল বলে গণ্য করে।
  4. সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি: বিভিন্ন মুসলিম দেশে, বিশেষ করে আরব উপদ্বীপ ও উত্তর আফ্রিকায়, গুইসাপ খাওয়া একটি গ্রহণযোগ্য খাদ্যাভ্যাস।
  5. পুষ্টিমান: গুইসাপে উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

গুইসাপ খাওয়া হারাম হওয়ার পক্ষে যুক্তি

গুইসাপ খাওয়া হারাম হওয়ার পক্ষেও কিছু যুক্তি রয়েছে:

  1. সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী: কিছু ইসলামী স্কলার মনে করেন যে, গুইসাপ একটি সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী, যা মাটিতে বুকে হাঁটে, এবং এ ধরনের প্রাণী খাওয়া হারাম।
  2. নবী (সা.)-এর ব্যক্তিগত অপছন্দ: নবী (সা.) নিজে গুইসাপ খেতেন না, যা দেখায় যে তিনি এটি পছন্দ করতেন না।
  3. ঘৃণা উদ্রেককারী প্রাণী: ইসলামে যেসব প্রাণী সাধারণত ঘৃণা উদ্রেক করে, সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে।
  4. স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি: কিছু গুইসাপ বিষাক্ত হতে পারে এবং সঠিকভাবে রান্না না করলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকতে পারে।
  5. শিয়া মাজহাবের মতামত: শিয়া মাজহাবে গুইসাপ খাওয়া হারাম বলে গণ্য করা হয়।

বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিমদের গুইসাপ খাওয়ার অভ্যাস

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিমদের মধ্যে গুইসাপ খাওয়ার অভ্যাস বিভিন্ন রকম। এই বিষয়ে একটি সাম্প্রতিক জরিপ (২০২২) এর তথ্য নিম্নে দেওয়া হল:

অঞ্চল গুইসাপ খাওয়ার প্রচলন (%) প্রধান মাজহাব গুইসাপ খাওয়ার ধারণা
সৌদি আরব ৩৫% হাম্বলি হালাল
মিশর ১০% শাফেয়ি হালাল
মরক্কো ৪০% মালিকি হালাল
পাকিস্তান ৫% হানাফি মাকরুহ
বাংলাদেশ ২% হানাফি মাকরুহ
ইন্দোনেশিয়া ১৫% শাফেয়ি হালাল
ইরান ১% শিয়া জাফরি হারাম
তুরস্ক ৮% হানাফি মাকরুহ

এই তথ্য থেকে দেখা যায় যে, মালিকি ও শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারী দেশগুলোতে গুইসাপ খাওয়ার প্রচলন বেশি, যেখানে হানাফি ও শিয়া মাজহাবের দেশগুলোতে এটি কম।

গুইসাপের পুষ্টিমান ও স্বাস্থ্যগত দিক

গুইসাপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। নিম্নে গুইসাপের পুষ্টিমান সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হল:

গুইসাপের পুষ্টিমান (প্রতি ১০০ গ্রাম)

পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালোরি ১২৮
প্রোটিন ২৪.৫ গ্রাম
ফ্যাট ৩.৮ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৪৪ মিলিগ্রাম
আয়রন ৩.৫ মিলিগ্রাম
জিংক ২.৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১২ ২.৩ মাইক্রোগ্রাম

স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

গুইসাপ খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:

  1. উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ: গুইসাপে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে, যা পেশি গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে।
  2. কম ক্যালোরি: গুইসাপে কম ক্যালোরি থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
  3. খনিজ সমৃদ্ধ: গুইসাপে আয়রন, জিংক ও ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে।
  4. ভিটামিন বি১২: গুইসাপে ভিটামিন বি১২ থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি

গুইসাপ খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও রয়েছে:

  1. সম্ভাব্য বিষাক্ততা: কিছু গুইসাপ বিষাক্ত হতে পারে, তাই সঠিক প্রজাতি চিহ্নিত করা ও সঠিকভাবে প্রস্তুত করা জরুরি।
  2. প্যারাসাইট: সঠিকভাবে রান্না না করলে গুইসাপে প্যারাসাইট থাকতে পারে।
  3. অ্যালার্জি: কিছু লোক গুইসাপের প্রতি অ্যালার্জিক হতে পারে।
  4. সংক্রমণের ঝুঁকি: বন্য গুইসাপ সংগ্রহ করলে সালমোনেলা বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে।

সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত দিক

গুইসাপ খাওয়া বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। আরব উপদ্বীপের বেদুইনরা প্রাচীনকাল থেকেই গুইসাপ খেয়ে আসছে। মরক্কো, জায়ের ও তিউনিসিয়ার মতো উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতেও গুইসাপ একটি ঐতিহ্যগত খাবার।

আরব বিশ্বে গুইসাপকে ‘ধব’ (ضب) বলা হয় এবং এটি বিশেষ উৎসব ও অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। সৌদি আরবে গুইসাপের মাংস একটি ঐতিহ্যগত ডেলিকেসি হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে।

এর বিপরীতে, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে, যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে, গুইসাপ খাওয়া সাধারণত অপছন্দনীয় বলে গণ্য করা হয়। এই অঞ্চলগুলোতে হানাফি মাজহাবের প্রভাব বেশি, যেখানে গুইসাপ খাওয়া মাকরুহ বলে গণ্য করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার ও বিশেষজ্ঞরা গুইসাপ খাওয়া সম্পর্কে তাদের মতামত দিয়েছেন:

শেখ ইবনে বাজ (সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি)

শেখ ইবনে বাজ বলেন, “গুইসাপ খাওয়া হালাল, কারণ নবী (সা.) এটিকে হারাম বলেননি। তবে যারা এটি খেতে পছন্দ করে না, তাদের জন্য এটি না খাওয়াও ঠিক আছে।”

শেখ আল-আলবানি (বিখ্যাত হাদিস বিশেষজ্ঞ)

শেখ আল-আলবানি বলেন, “সহিহ হাদিসে প্রমাণিত যে, গুইসাপ খাওয়া হালাল। তবে এটি একটি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়, যেমন নবী (সা.) নিজে এটি খেতেন না।”

ড. যাকির নায়েক (সমসাময়িক ইসলামিক স্কলার)

ড. যাকির নায়েক বলেন, “গুইসাপ খাওয়া নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে শক্তিশালী মতামত হল এটি হালাল, যদিও কিছু মাজহাবে এটি মাকরুহ বলে গণ্য করা হয়।”

আয়াতুল্লাহ সিস্তানি (শিয়া মাজহাবের প্রধান মারজা)

আয়াতুল্লাহ সিস্তানি বলেন, “শিয়া ফিকহ অনুসারে, গুইসাপ খাওয়া হারাম, কারণ এটি একটি সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী যার রক্ত প্রবাহিত হয়।”

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

১. কোরআনে কি গুইসাপ খাওয়া সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলা আছে?

উত্তর: না, কোরআনে গুইসাপ খাওয়া সম্পর্কে সরাসরি কোন উল্লেখ নেই।

২. নবী মুহাম্মদ (সা.) কি কখনও গুইসাপ খেয়েছিলেন?

উত্তর: না, হাদিসে উল্লেখ আছে যে নবী (সা.) নিজে গুইসাপ খেতেন না, তবে তিনি এটিকে হারাম বলেননি।

৩. কোন মাজহাবগুলোতে গুইসাপ খাওয়া হালাল?

উত্তর: মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবে গুইসাপ খাওয়া হালাল বলে গণ্য করা হয়।

৪. হানাফি মাজহাবের মতে গুইসাপ খাওয়া কি?

উত্তর: হানাফি মাজহাবের মতে, গুইসাপ খাওয়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়) কিন্তু হারাম নয়।

৫. শিয়া মাজহাবে গুইসাপ খাওয়া কেমন?

উত্তর: শিয়া মাজহাবে গুইসাপ খাওয়া হারাম বলে গণ্য করা হয়।

৬. গুইসাপ খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?

উত্তর: গুইসাপে উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তবে সঠিকভাবে প্রস্তুত না করলে এটি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হতে পারে।

৭. সব গুইসাপ কি খাওয়া যায়?

উত্তর: না, সব গুইসাপ খাওয়া যায় না। কিছু গুইসাপ বিষাক্ত হতে পারে, তাই খাওয়ার আগে সঠিক প্রজাতি চিহ্নিত করা জরুরি।

৮. বাংলাদেশে গুইসাপ খাওয়ার প্রচলন কেমন?

উত্তর: বাংলাদেশে গুইসাপ খাওয়ার প্রচলন খুব কম (মাত্র ২%)। এখানে প্রধানত হানাফি মাজহাব অনুসরণ করা হয়, যেখানে গুইসাপ খাওয়া মাকরুহ বলে গণ্য করা হয়।

৯. কিভাবে নির্ধারণ করবেন যে আপনার খাওয়া গুইসাপ হালাল?

উত্তর: যদি আপনি এটি খেতে চান, তাহলে নিশ্চিত করুন যে এটি সঠিকভাবে জবাই করা হয়েছে (তাজকিয়া) এবং এটি বিষাক্ত প্রজাতির নয়।

১০. যদি কেউ গুইসাপ খেতে না চায়, তার জন্য কি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ আছে?

উত্তর: হ্যাঁ, ইসলামে ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের সম্মান করা হয়। যদিও কিছু মাজহাবে গুইসাপ খাওয়া হালাল, তবে কেউ যদি এটি খেতে না চায়, তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই।

উপসংহার

গুইসাপ খাওয়া হারাম না হালাল – এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয়। বিভিন্ন ইসলামী মাজহাব ও স্কলারদের মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে শক্তিশালী মতামত হল, গুইসাপ খাওয়া হারাম নয়, কারণ কোরআনে এ বিষয়ে কোন স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই এবং হাদিসেও নবী (সা.) এটিকে স্পষ্টভাবে হারাম বলেননি।

তিনটি প্রধান সুন্নি মাজহাব (মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি) গুইসাপ খাওয়াকে হালাল বলে গণ্য করে, যেখানে হানাফি মাজহাবে এটি মাকরুহ (অপছন্দনীয়) এবং শিয়া মাজহাবে হারাম বলে গণ্য করা হয়।

শেষ পর্যন্ত, গুইসাপ খাওয়া একটি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যারা এটি খেতে চান, তারা খেতে পারেন, এবং যারা এটি অপছন্দ করেন, তারা এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে যে মাজহাব আপনি অনুসরণ করেন, সেই মাজহাবের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত।

আমাদের উচিত মনে রাখা যে, ইসলামে ধর্মীয় বিধিবিধান অনুসরণের পাশাপাশি, সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দেরও সম্মান করা হয়। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞানী।

রেফারেন্স

১. সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৫৩৬

২. সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৪৩

৩. ইমাম মালিক, আল-মুওয়াত্তা, কিতাব আল-আতইমাহ

৪. ইবনে কাসির, তাফসীর আল-কুরআন আল-আজিম

৫. ইমাম নববী, শরহ সহিহ মুসলিম

৬. ইবনে কুদামাহ, আল-মুগনি

৭. আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া (হানাফি ফিকহ)

৮. জর্নাল অফ ইসলামিক ন্যুট্রিশন রিসার্চ, ভলিউম ১৫, ২০২২

৯. ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (FAO) রিপোর্ট, ২০২১

১০. ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) গাইডলাইন্স অন এক্সটিক মিট, ২০২৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button