পিরানহা মাছ কি হালাল
আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশে হাজার হাজার প্রজাতির মাছ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু মাছ আমাদের কাছে পরিচিত, আবার কিছু মাছ রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা তেমন জানি না। বিশেষ করে যখন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোন প্রাণী হালাল কি হারাম – এ প্রশ্ন উঠে আসে, তখন মুসলমানদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। পিরানহা মাছ, যা দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন নদী ও তার উপনদীগুলোতে পাওয়া যায়, এটি এমনই একটি প্রজাতি যা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে – “পিরানহা মাছ কি হালাল?”
পিরানহা মাছ এর ধারালো দাঁত ও মাংসাশী স্বভাবের কারণে বিশ্বব্যাপী কুখ্যাত। অনেক সময় হলিউড চলচ্চিত্রে এদের আক্রমণাত্মক ও হিংস্র প্রাণী হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, একটি মাছ হালাল কিনা তা নির্ভর করে বেশ কিছু নির্দিষ্ট মাপকাঠির উপর। এই প্রবন্ধে আমরা গভীরভাবে আলোচনা করব, ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে পিরানহা মাছ হালাল কিনা, এবং কেন?
পিরানহা মাছ: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
পিরানহা হল Serrasalmidae পরিবারের অন্তর্গত একটি মাছের গোষ্ঠী, যা দক্ষিণ আমেরিকার মিঠা পানির নদী, হ্রদ এবং বন্যায় প্লাবিত অঞ্চলে বসবাস করে। বর্তমানে প্রায় ৪০-৬০ প্রজাতির পিরানহা সনাক্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে পরিচিত প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে রেড-বেলিড পিরানহা (Pygocentrus nattereri), যা আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য সবচেয়ে বেশি কুখ্যাত।
পিরানহা মাছের বৈশিষ্ট্য:
- আকার ও গঠন: সাধারণত ১৫-২৫ সেন্টিমিটার (৬-১০ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট, তবে কিছু প্রজাতি ৪০ সেন্টিমিটার (১৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত বড় হতে পারে।
- দাঁত: তীক্ষ্ণ, ত্রিভুজাকার দাঁত যা একসাথে শক্তভাবে আঁটসাঁট থাকে, যার মাধ্যমে তারা তাদের শিকারকে সহজে ছিন্নভিন্ন করতে পারে।
- খাদ্যাভ্যাস: বিপরীত জনপ্রিয় ধারণার, বেশিরভাগ পিরানহাই সম্পূর্ণ মাংসাশী নয়। তারা সাধারণত উভয়ভোজী, ফল, বীজ, উদ্ভিদ উপাদান এবং মাছের মৃত দেহ খায়। মানুষের উপর আক্রমণ অত্যন্ত বিরল।
- বাসস্থান: তারা মূলত দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন বেসিন, ওরিনোকো, সাও ফ্রান্সিসকো, পারানা-প্যারাগুয়ে এবং এসেকুইবো নদী ব্যবস্থায় পাওয়া যায়।
- সামাজিক আচরণ: তারা সাধারণত ঝাঁকে বাস করে এবং সম্মিলিতভাবে শিকার করে, যা তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা এবং শিকার করার ক্ষমতা বাড়ায়।
ইসলামে হালাল খাবারের মৌলিক নীতিমালা
ইসলামিক শরিয়াহ অনুসারে, খাদ্যের হালাল-হারাম নির্ধারণের জন্য কিছু মৌলিক নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিগুলো বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর উপর ভিত্তি করেই আমরা পিরানহা মাছ হালাল কিনা তা নির্ধারণ করতে পারব।
পবিত্র কুরআন থেকে নির্দেশনা:
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের এবং মুসাফিরদের উপকারার্থে। আর তোমাদের জন্য স্থলের শিকার হারাম করা হয়েছে যতক্ষণ তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাক।” (সূরা আল-মাইদাহ, ৫:৯৬)
এই আয়াতে “সমুদ্রের শিকার ও খাদ্য” বলতে সাধারণভাবে সমুদ্র, নদী, হ্রদ ইত্যাদি পানির উৎস থেকে প্রাপ্ত খাদ্যকে বোঝানো হয়েছে।
হাদিস থেকে নির্দেশনা:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সমুদ্র সম্পর্কে বলেছেন:
“সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মধ্যে মৃত প্রাণী হালাল।” (সুনান আবু দাউদ, তিরমিজি)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে পানিতে বসবাসকারী প্রাণীদের ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হল, তারা হালাল, যদি না কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ তাদের হারাম হওয়ার পক্ষে থাকে।
বিভিন্ন ইসলামী মাজহাবের দৃষ্টিকোণে সামুদ্রিক প্রাণী
ইসলামে চারটি প্রধান মাজহাব (ফিকহী স্কুল) রয়েছে – হানাফী, মালিকী, শাফেয়ী এবং হাম্বলী। প্রতিটি মাজহাবের সামুদ্রিক প্রাণী সম্পর্কে নিজস্ব মতামত রয়েছে, যা পিরানহা মাছের হালাল-হারাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১. হানাফী মাজহাব:
হানাফী মাজহাব অনুসারে, শুধুমাত্র আঁশযুক্ত মাছই হালাল। এই মাজহাবের মতে, মাছ ছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী যেমন – কাঁকড়া, চিংড়ি, কচ্ছপ ইত্যাদি হালাল নয়। এছাড়া, যে মাছ স্বাভাবিকভাবে পানিতে মারা গেছে (ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে), তা খাওয়া মাকরূহ (অপছন্দনীয়)।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মতে, জলজ প্রাণীদের মধ্যে শুধুমাত্র মাছই হালাল, অন্যান্য জলজ প্রাণী হারাম। তবে তাঁর ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) এবং ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) এর মতে, এমন সব মাছ যা রক্ত প্রবাহিত হয় না, সেগুলো হালাল।
২. মালিকী মাজহাব:
মালিকী মাজহাবের মতে, সমস্ত ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী হালাল, তা সে মাছ হোক বা অন্য কোন প্রাণী। তাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, কুরআনের আয়াত “তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও খাদ্য হালাল করা হয়েছে” (৫:৯৬) এর ব্যাপক অর্থ অনুযায়ী সমস্ত সামুদ্রিক প্রাণীই হালাল।
৩. শাফেয়ী মাজহাব:
শাফেয়ী মাজহাবের মতে, সমস্ত ধরনের মাছ এবং সামুদ্রিক প্রাণী হালাল, যেগুলোকে আরবি ভাষায় “সামাক” (মাছ) বলা হয়। তবে কিছু উলামা মতে, যেসব জলজ প্রাণী বিষাক্ত, ক্ষতিকারক বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. হাম্বলী মাজহাব:
হাম্বলী মাজহাবের মতেও, সমস্ত ধরনের মাছ হালাল। তবে অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী যেমন – কাঁকড়া, চিংড়ি ইত্যাদির ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কিছু উলামা মতে, এগুলোও হালাল, আবার কিছু উলামা মতে, এগুলো হালাল নয়।
পিরানহা মাছের হালাল স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ
এখন আমরা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে পিরানহা মাছের হালাল-হারাম স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ করব:
১. পিরানহার শ্রেণীবিন্যাস:
পিরানহা একটি আঁশযুক্ত মাছ, যা Serrasalmidae পরিবারের অন্তর্গত। প্রাণীবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিঃসন্দেহে একটি মাছ, এবং মাছ হিসেবে এর সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি পানিতে বাস করে, ফুলকা দিয়ে শ্বাস নেয়, এবং এর দেহে আঁশ রয়েছে।
২. বিভিন্ন মাজহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে পিরানহা:
- হানাফী মাজহাব: পিরানহা একটি আঁশযুক্ত মাছ হওয়ায়, হানাফী মাজহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি হালাল। তবে, যদি এটি পানিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় (ভাসমান অবস্থায়), তবে তা খাওয়া মাকরূহ (অপছন্দনীয়)।
- মালিকী মাজহাব: মালিকী মাজহাবের মতে, সমস্ত সামুদ্রিক প্রাণী হালাল, তাই পিরানহা মাছও হালাল।
- শাফেয়ী মাজহাব: শাফেয়ী মাজহাবের মতে, সমস্ত ধরনের মাছ হালাল, তাই পিরানহা মাছও হালাল।
- হাম্বলী মাজহাব: হাম্বলী মাজহাবের মতে, সমস্ত ধরনের মাছ হালাল, তাই পিরানহা মাছও হালাল।
৩. পিরানহার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আলোচনা:
পিরানহা মাছ কখনো কখনো অন্যান্য মাছ বা প্রাণীদের খেয়ে থাকে, যা কিছু মুসলমানদের মনে প্রশ্ন তৈরি করতে পারে – মাংসাশী মাছ হালাল কিনা? এই প্রসঙ্গে, বিশিষ্ট আলেমদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে।
তবে, প্রধান চারটি মাজহাবের কোনোটিই মাছের খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে হালাল-হারাম নির্ধারণ করে না। প্রকৃতপক্ষে, অনেক মাছই অন্যান্য ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ বা জলজ প্রাণী খেয়ে থাকে। যদি মাংসাশী হওয়ার কারণে মাছকে হারাম বিবেচনা করা হত, তাহলে অনেক সাধারণ মাছই (যেমন – রুই, কাতলা ইত্যাদি) হারাম হতে পারত, কারণ এরাও ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
৪. বিষাক্ততার বিষয়টি:
কিছু ইসলামিক পণ্ডিত মনে করেন, যে সমস্ত প্রাণী বিষাক্ত বা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো এড়ানো উচিত। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পিরানহা মাছ সাধারণত বিষাক্ত নয় এবং অনেক দেশে এটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
পিরানহা মাছের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
পিরানহা মাছের হালাল-হারাম বিষয় ছাড়াও, এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও পশ্চিমা দেশে এটি খাওয়া কমই হয়, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে পিরানহা একটি জনপ্রিয় খাবার।
পুষ্টিগুণ:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (১০০ গ্রাম মাছে) |
---|---|
ক্যালোরি | ১২০-১৫০ |
প্রোটিন | ২০-২৪ গ্রাম |
চর্বি | ৩-৮ গ্রাম |
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড | উল্লেখযোগ্য পরিমাণে |
ভিটামিন ডি | উল্লেখযোগ্য পরিমাণে |
ভিটামিন বি১২ | উল্লেখযোগ্য পরিমাণে |
সেলেনিয়াম | উল্লেখযোগ্য পরিমাণে |
আয়োডিন | উল্লেখযোগ্য পরিমাণে |
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১. উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ: পিরানহা মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে, যা পেশী গঠন ও মেরামতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: অন্যান্য মাছের মতো, পিরানহাতেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, প্রদাহ কমায় এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
৩. ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ: এতে ভিটামিন ডি, বি১২, সেলেনিয়াম, আয়োডিন, জিঙ্ক ইত্যাদি রয়েছে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য।
৪. কম ক্যালোরি ও চর্বি: অন্যান্য মাংসের তুলনায় পিরানহা মাছে কম ক্যালোরি ও চর্বি রয়েছে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
পিরানহা মাছ রান্না ও খাওয়ার পদ্ধতি
যদি আপনি পিরানহা মাছ খেতে চান এবং এটি হালাল উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারেন, তাহলে এখানে কিছু রান্নার পদ্ধতি দেওয়া হলো:
১. ব্রাজিলিয়ান স্টাইল গ্রিলড পিরানহা:
উপকরণ:
- পিরানহা মাছ: ৪-৫টি (সাফ করা)
- লেবুর রস: ২ টেবিল চামচ
- লবণ: স্বাদমতো
- কালো গোলমরিচ: স্বাদমতো
- রসুন: ৪-৫ কোয়া (পেস্ট করা)
- তেল: ৩ টেবিল চামচ
- ধনেপাতা: কুচি করা
প্রস্তুত প্রণালী:
- মাছগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- লেবুর রস, লবণ, গোলমরিচ, রসুন পেস্ট ও তেল মিশিয়ে একটি মেরিনেড তৈরি করুন।
- মাছগুলোকে এই মেরিনেডে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
- গ্রিল প্যান গরম করুন এবং মাছগুলো উভয় পাশে ৫-৭ মিনিট করে গ্রিল করুন।
- পরিবেশনের আগে কুচি করা ধনেপাতা ছিটিয়ে দিন।
২. পেরুভিয়ান পিরানহা সেভিচে:
উপকরণ:
- পিরানহা মাছের ফিলে: ৫০০ গ্রাম (ছোট টুকরা করা)
- লেবু/লাইম: ৮-১০টি (রস বের করা)
- লাল পেঁয়াজ: ১টি (কুচি করা)
- ধনেপাতা: ১/২ কাপ (কুচি করা)
- লঙ্কা: ২-৩টি (কুচি করা)
- লবণ: স্বাদমতো
- কাঁচা মরিচ: স্বাদমতো
প্রস্তুত প্রণালী:
- মাছের টুকরাগুলো লেবুর রসে ডুবিয়ে ৩-৪ ঘন্টা ফ্রিজে রাখুন।
- পেঁয়াজ, ধনেপাতা, লঙ্কা, লবণ ও কাঁচা মরিচ যোগ করুন।
- ভালো করে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিরানহা মাছের ব্যবহার
পিরানহা মাছ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:
১. ব্রাজিল:
ব্রাজিলে পিরানহা মাছ একটি জনপ্রিয় খাবার, বিশেষ করে অ্যামাজন অঞ্চলে। এখানে “Piranha Frita” (ভাজা পিরানহা) এবং “Piranha na Brasa” (গ্রিলড পিরানহা) জনপ্রিয় ডিশ। এছাড়া, ব্রাজিলিয়ানরা বিশ্বাস করে যে পিরানহা স্যুপ যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
২. পেরু:
পেরুতে পিরানহা মাছকে সেভিচে হিসেবে প্রস্তুত করা হয়, যেখানে কাঁচা মাছকে লেবুর রসে ম্যারিনেট করা হয়। এছাড়া, “Juane de Piranha” নামক একটি ডিশ রয়েছে, যেখানে পিরানহা মাছকে প্লাটানো পাতায় মুড়িয়ে সিদ্ধ করা হয়।
৩. কলম্বিয়া:
কলম্বিয়াতে “Piranha a la Plancha” (গ্রিলড পিরানহা) এবং “Sancocho de Piranha” (পিরানহা স্টিউ) জনপ্রিয়।
৪. ভেনেজুয়েলা:
ভেনেজুয়েলাতে পিরানহা মাছকে “Mojito de Piranha” নামক একটি ডিশে ব্যবহার করা হয়, যেখানে মাছকে লেবু, রসুন, ধনেপাতা ও মরিচ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়।
বাংলাদেশে পিরানহা মাছের প্রাপ্যতা
বাংলাদেশে পিরানহা মাছ প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না, কারণ এটি দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় প্রজাতি। তবে, কিছু অ্যাকুয়ারিয়াম এন্থুসিয়াস্টরা এদেরকে পোষা হিসেবে রাখেন। বাংলাদেশে অবৈধভাবে পিরানহা মাছ আমদানি করা বেআইনি, কারণ এটি একটি আক্রমণাত্মক প্রজাতি যা দেশীয় জলজ ইকোসিস্টেমের জন্য হুমকি হতে পারে।
যদি কেউ বাংলাদেশে পিরানহা মাছ খেতে চান, তাহলে তাকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হবে, যা খুবই দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল। এছাড়া, হালাল সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. পিরানহা মাছ কি সত্যিই হালাল?
উত্তর: হ্যাঁ, ইসলামের প্রধান চারটি মাজহাবের (হানাফী, মালিকী, শাফেয়ী, হাম্বলী) মতে, পিরানহা মাছ হালাল। কারণ এটি একটি আঁশযুক্ত মাছ, যা সমস্ত মাজহাবের মতে হালাল।
২. পিরানহা মাছ তো মাংসাশী, এটি কি হালাল হতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, মাছের খাদ্যাভ্যাস তার হালাল-হারাম স্ট্যাটাসকে প্রভাবিত করে না। অনেক সাধারণ মাছই (যেমন – রুই, কাতলা) ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি খেয়ে থাকে। ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, মাছের হালাল-হারাম নির্ধারণ তার প্রজাতির উপর নির্ভর করে, তার খাদ্যাভ্যাসের উপর নয়।
৩. পিরানহা মাছ কি বিষাক্ত?
উত্তর: না, পিরানহা মাছ সাধারণত বিষাক্ত নয়। এটি দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে, অন্যান্য মাছের মতো, এটি সঠিকভাবে প্রস্তুত ও রান্না করা উচিত।
৪. পিরানহা মাছ কিভাবে জবাই করা উচিত?
উত্তর: ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, মাছকে জবাই করার প্রয়োজন নেই। মাছকে পানির বাইরে আনলেই তা হালাল হয়ে যায়। হানাফী মাজহাবের মতে, যদি মাছ পানিতে মরে যায় এবং ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়, তবে তা খাওয়া মাকরূহ (অপছন্দনীয়), তবে হারাম নয়।
৫. বাংলাদেশে কি পিরানহা মাছ পাওয়া যায়?
উত্তর: বাংলাদেশে পিরানহা মাছ প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না। কিছু অ্যাকুয়ারিয়াম এন্থুসিয়াস্টরা এদেরকে পোষা হিসেবে রাখেন, তবে এটি অবৈধ। বাংলাদেশে পিরানহা মাছ খাওয়ার জন্য, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হবে, যা দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল।
উপসংহার
সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে, ইসলামিক শরিয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে পিরানহা মাছ হালাল। প্রধান চারটি মাজহাবের সকলেই এটিকে হালাল হিসেবে বিবেচনা করে, কারণ এটি একটি আঁশযুক্ত মাছ।
হালাল খাবার গ্রহণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যা হালাল করেছেন, তা গ্রহণ করা এবং যা হারাম করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। পিরানহা মাছ যেহেতু হালাল, তাই যদি এটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা হয় এবং হালাল উৎস থেকে প্রাপ্ত হয়, তাহলে এটি খাওয়া যেতে পারে।
তবে, অধিকাংশ মুসলিম দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, পিরানহা মাছ সহজলভ্য নয়। এছাড়া, এর স্বাদ ও খাদ্যমান সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত। তাই, যদি কেউ পিরানহা মাছ খেতে চান, তাহলে তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে এটি হালাল উৎস থেকে এসেছে এবং সঠিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
সর্বশেষে, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যে খাবার হালাল করেছেন, তাতে অনেক উপকারিতা রয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তার মধ্য থেকে পবিত্র বস্তুসমূহ আহার করো এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো, যদি তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে থাকো।” (সূরা আল-বাকারা, ২:১৭২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।